ঘুমের রাজ্যে পৃথিবী স্বপ্নময়

সবচেয়ে সুখী মানুষ কারা জানেন? যারা চাওয়ামাত্র ঘুমাতে পারে। কি, মুখটা বাঁকালেন তো? শুনুন, রাতের ঘুম হারাম করে যখন এই লেখাটা লিখছি, মেরুদন্ডটা যেন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে—সে আর সোজা থাকবে না! ঘরের মেঝেকেও মনে হচ্ছে পালকের আসন—গা'টা একটু এলাতে পারলে বাঁচি। এই মুহূর্তে ঘুমের চেয়ে শান্তির আর কী হতে পারে? অবশ্য যারাই টেনশনে বা রোগে ভুগে সারা রাত জেগে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেছেন তারা যে আমার কথায় সায় দেবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এই ঘুমটা কিন্তু বড্ড কাজের। হাঁ, খুব কাজের মানুষ যারা তাদেরও বলছি—একটানা গভীর ঘুম আপনার এনার্জিকে বাড়িয়ে দেয় অনেকখানি। কম্পিউটারের মতন ব্রেনের-ও ‘রিফ্রেশারের’ কাজ করে এই ঘুম। তবে এটাও ঠিক যে, ঘুমটা হতে হবে পরিমিত। বেশি বা কম হলেই সারাদিনের সুরটা বেতাল হয়ে যাবে। যারা ভাবেন যে ক্লান্ত লাগছে বলে আরেকটু গড়াগড়ি করে নেই, তারা কিন্তু এর মাশুল দেন পরের পুরোটা সময়। খিটখিটে মেজাজ আর কাজে অমনোযাগ তো আছেই, সাথে থাকে ঐ যেটাকে সোজা বাংলায় বলে ‘গা ম্যাজ্ ম্যাজ্’ করা। কাজেই চেষ্টা করুন দেহ ঘড়িকে একটা সময়ের ছকে নিয়ে আসতে। প্রতিদিন এক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর উঠার অভ্যাস আপনার সারাদিনের ক্লান্তিকে কমিয়ে দিতে পারে অনেকখানি।

যারা ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে যান তাদের জন্যে সুখবর হলো—আছে, বিকল্প বহু পথই আছে। এমনকি চোখ বন্ধ করে কয়েক মিনিটের দমচর্চা বা শিথিলায়নও আপনাকে একই ফল দিবে। মূল ব্যাপারটা হলো শরীরটাকে শান্ত করা, বোঝানো যে বিশ্রামের সময় হয়েছে। এজন্যেই টিভি দেখলে ঘুম আসতে চায় না। কারণ চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র পরকীয়া নির্ভর টিভি সিরিয়াল দেখে শান্ত থাকা খুবই কঠিন। আবার ভারি খাবার যদিও সাময়িক অবসন্নতা ডেকে আনে, এর ক্ষতিকারক দিক হলো পরের দিন সকালে প্রচন্ড ক্লান্তি নিয়ে উঠা। বরং হাল্কা খাবার, যেমন রুটি বা ব্রেডের সাথে এক গ্লাস দুধ (বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে বলে কার্বোহাইড্রেট) আপনার সেরোটনিন প্রবাহকে বাড়িয়ে দিয়ে বেশ একটা ঘুম-ঘুম অনুভূতি সৃষ্টি করবে।

ঘুমের বেলায় আরেকটা নিষেধ হলো ক্লান্ত লাগলেই ঘুমিয়ে যাওয়া। এর কৌশলটা হলো সময়টা মেনে চলতে হবে। কাজের ফাঁকে মিনিট ১৫-র ঘুম আপনার জন্যে চমৎকার টনিকের কাজ করতে পারে, কিন্তু এর বেশি হলেই বিপদ। কারণ তখন ব্রেন গভীর সাইকেলে চলে যায় এবং ‘রেম’ পুরোটা শেষ না করেই যদি তাকে উঠতে হয় তবে আগের চেয়েও বেশি ক্লান্তি আসতে পারে।

উপসংহারে তাই বলব, ঘুমান, মন ভরে ঘুমান, নিয়ম মেনে ঘুমান এবং তৃপ্তির সাথে কাজ করুন। দেখবেন ঘুমের স্বপ্ন বাস্তবেও ধরা দিবে।