মেডিটেশনে ঘুমিয়ে পড়ছেন? প্রতিকারে যা করবেন

মধ্যরাত। নাসিরুদ্দিন হোজা ফাঁকা রাস্তায় একা একা হেঁটে যাচ্ছেন। নৈশপ্রহরী তার পথ আটকে জানতে চাইল, এত রাতে অন্ধকার রাস্তা ধরে তিনি কোথায় যাচ্ছেন।  

হোজা উদাস কন্ঠে জবাব দিলেন, ‘আমার ঘুম হারিয়ে গেছে, তাকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এসেছি!’

এটা একটি কৌতুক। তবে বাস্তবেও হোজার মতো ঘুম খোঁজার লোক এখন হরহামেশাই দেখা যায়। বিছানায় যাওয়ামাত্র যারা ঘুমাতে পারেন তারা সত্যিই সৌভাগ্যবান।  

তবে মেডিটেশনে ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা থাকলে এখনই সচেতন হোন

কারণ মেডিটেশনে ঘুমিয়ে পড়লে আপনি গভীর ঘুমের স্বাদ পেলেও পাবেন না গভীর ধ্যানের স্বাদ। মেডিটেশনের উপকারিতা পুরোপুরি পেতে হলে আপনাকে সজাগ থাকতে হবে এর শুরু থেকে শেষ অবধি।

মেডিটেশন করতে বসলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা যদি আপনারও থাকে তাহলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সাধারণ কয়েকটি কৌশল অনুসরণ করলেই আপনি ধ্যানের স্তরে সজাগ থাকতে পারবেন।  

পুরোপুরি ভরা বা খালি পেটে কখনোই নয় 

কারণ মেডিটেশনের জন্যে ভালো নয় এই দুটো অবস্থার কোনোটিই।

ক্ষুধার্ত অবস্থায় মেডিটেশন করলে মনোযোগ দিতে সমস্যা হতে পারে। আবার ভরপেট খাওয়ার পরপরই মেডিটেশন করতে গেলে ঘুম আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কাজেই পেটের এই দুটোর মাঝামাঝি অবস্থায় মেডিটেশন করুন।   

তবে যদি একান্তই খাওয়ার পরপরই মেডিটেশন করতে হয় তাহলে আগে ১০ মিনিট বজ্রাসন করুন। এরপর মেডিটেশনে বসুন।

দেহভঙ্গিমায় পরিবর্তন আনুন

সাধারণত শুয়ে মেডিটেশন করতে গেলে ঘুমিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই প্রবণতা যদি আপনারও থাকে তাহলে কখনোই শুয়ে মেডিটেশন করবেন না। বসে বা দাঁড়িয়ে করুন।

চেয়ারে বসে, অথবা দেয়াল বা অন্য কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে মেডিটেশন করলেও ঘুম আসতে পারে। এ-ক্ষেত্রে পদ্মাসন, বজ্রাসন বা বঙ্গাসনে বসে মেডিটেশন করাটা নিরাপদ; ঘুম বা তন্দ্রা আসার সুযোগই পাবে না!  

তন্দ্রাভাব এলেই দাঁড়িয়ে যান

আপনি যদি মেডিটেশনের কোনো প্রোগ্রামে অংশ নেন, যেখানে পুরোটা সময় চেয়ারে বসে থাকতে হয় বা এমন হয় যে বাসায় চেয়ারে বসেই মেডিটেশন করতে হবে তাহলে একটি টেকনিক অনুসরণ করুন। খেয়াল করুন আপনার তন্দ্রাভাব আসছে কিনা।  

মেরুদণ্ড বাঁকা হতে শুরু করলেই বুঝবেন ঘুম আসছে! আর এটা টের পাওয়ামাত্রই দাঁড়িয়ে যান। কোনো অবস্থাতেই আপনি দাঁড়িয়ে ঘুমাতে পারবেন না।  

অবশ্য ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা না থাকলেও মেডিটেশন দাঁড়িয়ে করতে পারেন। কারণ এতে এনার্জি লেভেল বাড়ে। দাঁড়িয়ে মেডিটেশন করুন না টানা এক বছর, দেখুন কোথায় পৌঁছায় আপনার এনার্জি লেভেল!

নিয়মিত কোয়ান্টাম ব্যায়াম করুন

সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন আধা ঘন্টা করে যোগব্যায়াম করুন। নিয়মিত যোগব্যায়ামে এনার্জি লেভেল বাড়ে, ফলে আলফা লেভেল, মানে ধ্যানের স্তরে দীর্ঘক্ষণ থাকাটা হয় সহজ। তাই যারা নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন তারা শুয়ে শুয়েও দিব্যি মেডিটেশন করতে পারেন ঘুম বা তন্দ্রাভাব ছাড়াই।

যোগ ব্যায়ামের আধুনিক ও অধিকতর কার্যকরী ভার্সন হলো কোয়ান্টাম ব্যায়াম। দুই দিনের কোয়ান্টাম ইয়োগা ওরিয়েন্টেশন করে বা ‘রোগ নিরাময়ে কোয়ান্টাম ব্যায়াম’ বইটি পড়ে আপনি নিজেই এই ব্যায়াম শিখতে ও অনুশীলন করতে পারবেন।

অটোসাজেশন দিন

মেডিটেশন করার আগে পাঁচ মিনিট শবাসন করুন। এই সময়টুকুতে অটোসাজেশন দিন- ‘আমার এখন একটু ঘুম ঘুম লাগছে। কিন্তু আমার এখন পুরোপুরি সজাগ ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আমি এখন পুরোপুরি সজাগ ও সতর্ক থাকব। এবং প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করব।‘

একদিনেই হয়তো সফল হবেন না; অটোসাজেশন চর্চা অব্যহত রাখুন। সময়ের সাথে সাথে সাফল্য আসতে থাকবে।

শাস্তির ব্যবস্থা করুন

কিছুতেই কাজ না হলে নিজের জন্যে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। অর্থদন্ড দিতে পারেন। যে পরিমাণ টাকা দান করতে গেলে ভেতরটা খচখচ করে প্রতিবার মেডিটেশনে ঘুমের জন্যে সেই পরিমাণ টাকা ম্যাটির ব্যাংকে দিয়ে দিন।

সেটাও যদি যথেষ্ট মনে না হয় তাহলে টাকার অঙ্ক বাড়াতে থাকুন। দেখবেন অর্থদণ্ডের ভয়ে মেডিটেশনে আর ঘুম আসছে না!