কোরবানির সামাজিকায়ন ২০২৫ : ঘরে ঘরে কল্যাণ, থাকুক বহমান

published : ২৬ মে ২০২৫

একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনমতে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালে কোরবানিকৃত পশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি চার লক্ষ। এর মধ্যে গরুই ছিল ৪৮ লক্ষাধিক।

গরুপ্রতি গড়ে দুই মণ হিসেবে ৪৭ লক্ষ গরুর মাংস আর কোরবানিকৃত অন্যান্য পশুর মাংস- সবমিলিয়ে মাংস পাওয়া যায় কমপক্ষে ৪০ কোটি কেজি। এই হিসেবে ১৬ কোটি মানুষের দেশে একেকজন আড়াই কেজি মাংস পাওয়ার কথা; ৪ জনের একটি পরিবার পাওয়ার কথা ১০ কেজি মাংস। কিন্তু বাস্তবে কি তা হচ্ছে?

না! ঈদুল আজহায় কোরবানির পরপরই দেখা যায় সাহায্যপ্রার্থী মানুষেরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাংস সংগ্রহ করছে। শহরের ফ্ল্যাটবাড়িতে যারা থাকেন, কোরবানির পর অভাবীদের ভাগের অংশটুকু স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যক্ষভাবে বিতরণ করতে পারেন না তারা। অনেকেই এই মাংসটুকু গ্যারেজে রেখে আসে, কেউ মাংস নিতে এলে দারোয়ান তাকে কিছু মাংস দেন। অর্থাৎ, মাংসটা তারাই পাচ্ছেন যারা নিতে আসতে পারেন। এভাবে তারা অনেক মাংস সংগ্রহ করেন এবং বাজারে বিক্রি করে দেন।

অপরদিকে যারা অভাবে থাকা সত্ত্বেও লোকলজ্জায় চাইতে পারেন না, তারা হয়ত ঈদুল আজহায় খেতে পান না এক টুকরো মাংসও। অথচ কোরবানির উদ্দেশ্য তো এটা না!

সবাইকে কোরবানির মাংস খাওয়ানো আল্লাহর নির্দেশ 

সূরা হজের ৩৬নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, কোরবানির পশু যখন জমিনে লুটিয়ে পড়ে, তখন তা থেকে (মাংস সংগ্রহ করে) তোমরা খাও এবং কেউ চাক না চাক সবাইকে খাওয়াও। 

আর সূরা হজের ২৮নং আয়াতে বলা হয়েছে, জবাই করা পশু থেকে তোমরা খাও এবং অভাবী দরিদ্রদের খাওয়াও।

অর্থাৎ, কোরবানির পশুর মাংস ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে অভাবী সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে বিতরণ করার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে পবিত্র কোরআনে। তাই যে মানুষগুলো মাংস নিতে আপনার দুয়ার পর্যন্ত আসতে পারেন না, তাকেও মাংস খাওয়ানোর দায়িত্ব আপনার আছে।

অতীতে এই দায়িত্ব পালনের চমৎকার একটা সিস্টেম আমাদের ছিল  

আগে আমাদের আর্থিক অবস্থান ভালো ছিল না। কোরবানি দেয়ার লোক ছিল কম, তবে কোরবানিতে অংশগ্রহণের মানুষ ছিল অনেক। দেখা যেত কয়েকজন মিলে একটা গরু কোরবানি দিত, জবেহ ও মাংস প্রসেসিংয়ে অংশ নিত গ্রাম বা এলাকার অনেক মানুষ। এখন থেকে ৫০/৬০ বছর আগেও গ্রামে, এমনকি শহরেও ছিল পঞ্চায়েত ব্যবস্থা; কোরবানির মাংস পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পৌঁছে যেত ঘরে ঘরে। 

অর্থাৎ, কোরবানির একটা চমৎকার সামাজিকায়ন তখন হতো।

এখন আমাদের আর্থিক সামর্থ্য অনেক বেড়েছে। একা আস্ত একটা গরু কোরবানি দেয়ার মানুষ এখন অনেক। কিন্তু কোরবানিকৃত পশুর মাংস বিতরণের সুন্দর বণ্টনব্যবস্থাটা আর নেই। ফলে মাংস খেতে না পারা মানুষগুলো থেকে যাচ্ছেন মনোযোগের অন্তরালে। অথচ সুষ্ঠ বণ্টনব্যবস্থা থাকলে কোরবানির সামাজিকায়নের কী বিশাল সম্ভাবনা আমাদের আছে তা আর্টিকেলের শুরুতে বলা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে।    

বিপুল কল্যাণের উৎস কোরবানির সামাজিকায়ন  

সূরা হজের ৩৬নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “কোরবানির পশুকে আল্লাহ তাঁর মহিমার প্রতীক করেছেন। তোমাদের জন্যে এতে রয়েছে বিপুল কল্যাণ”

এই ‘বিপুল কল্যাণ’ আসলে কী তা অনুভবের কিছুটা সুযোগ আমাদের হয়েছিল লামা কোরবানির মাধ্যমে। একটা সময় কোয়ান্টামম ছিল অতি দুর্গম একটি স্থান। আশেপাশের জনপদ ছিল হতদরিদ্র, যাদের অনেকেরই বছরে একবারও মাংস খাওয়ার সুযোগ হতো না। এই মানুষগুলোকে মাংসের স্বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল কোয়ান্টাম। ২০০২ সালে শুরু হলো ‘লামা কোরবানি’। 

২০১০ সালে সর্বশেষ লামা কোরবানিতে নাম দেন ১,২০৬ জন সদস্য ও শুভানুধ্যায়ী। তাদের পাঠানো অর্থে ১৮৬টি পশু কিনে কোরবানি করে প্রাপ্ত ১৭ হাজার ২৬৭ কেজি মাংস বিতরণ করা হয় ৮ হাজার ৫৪৯টি পরিবারের মাঝে। লামার সরই ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারে পৌঁছে যায় কোরবানির মাংস।

২০০২ থেকে ২০১০- এই ৯ বছরে চোখের সামনে জনপদটিকে বদলে যেতে দেখলাম আমরা। শুরুর বছর আমরা এমন অনেককেই পেয়েছিলাম, যারা জীবনে প্রথম গরু/ছাগলের মাংস খেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। অথচ মাত্র এই ক’বছরেই মানুষের আর্থিক অবস্থার এতটাই উন্নতি হয়েছে যে, সেখানে এখন এমন অনেক মানুষ আপনি পাবেন যারা নিজেরাই ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি দেন।

কোরবানির এই ‘বিপুল কল্যাণ’ আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই দেশব্যাপী 

আর তাই ‘কোরবানি ঘরে ঘরে কল্যাণ ঘরে ঘরে’ স্লোগানে গত বছর (২০২৪ সাল) প্রথম দেশব্যাপী কোরবানির সামাজিকায়ন আয়োজন করে কোয়ান্টাম। সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের পাঠানো অর্থ দিয়ে পশু কিনে কোরবানি করে প্রাপ্ত মাংস এবং তাদের নিজেদের কোরবানি করা পশু থেকে পাঠানো মাংস- এই দুটো উৎস থেকে পাওয়া মাংস করসেবার মাধ্যমে পৌছে দেয়া হয় ৯,৭১৫টি পরিবারে। যার মধ্যে 

  • কোয়ান্টামমে (লামা, বান্দরবান) কোরবানি হয় ৩০টি গরু এবং ২৬টি ছাগল। রান্না করে খাওয়ানো হয় ৬ হাজারের অধিক জনকে, মাংস পৌছে যায় ১,২০০টি পরিবারে 
  • ঢাকায় কোরবানি করা হয় ৫১টি গরু এবং ৪৫টি ছাগল। 
  • চট্টগ্রামে কোরবানি হয় ১৪টি গরু এবং ৩টি ছাগল। মাংস পায় ১,৪৩৬টি পরিবার
  • রাজশাহীতে কোরবানি হয় ৭টি গরু এবং ৩টি ছাগল। মাংস পায় ৭৮২টি পরিবার
  • সিলেটে কোরবানি হয় ৯টি গরু এবং ১৪টি ছাগল। মাংস পায় ৫৩৭টি পরিবার
  • খুলনায় কোরবানি হয় ১টি গরু এবং ৩টি ছাগল। মাংস পায় ২৫৩টি পরিবার
  • বরিশালে কোরবানি হয় ৩টি গরু এবং ৩টি ছাগল। মাংস পায় ২৩৩টি পরিবার
  • রংপুরে কোরবানি হয় ১টি গরু। মাংস পায় ৭২টি পরিবার
  • ময়মনসিংহে কোরবানি হয় ১টি গরু এবং ২টি ছাগল। মাংস পায় ১১৯টি পরিবার 

অংশ নিন এবারের কোরবানির সামাজিকায়নে 

‘ঘরে ঘরে কল্যাণ থাকুক বহমান’ স্লোগানে আমরা এবারও আয়োজন করতে যাচ্ছি কোরবানির সামাজিকায়ন- নতুন উদ্যমে, আরো বড় পরিসরে। প্রতি নাম ২১ হাজার টাকা হিসেবে এক বা একাধিক নামে অথবা নিজেদের কোরবানিকৃত পশুর মাংস থেকে যে-কোনো পরিমাণ ফাউন্ডেশনে পাঠানোর মাধ্যমে আপনিও শরিক হতে পারেন এই মহতী উদ্যোগে। 

টাকা জমা দিতে পারেন-

  • সরাসরি আমাদের শাখা, সেল বা সেন্টারে এসে। আপনার নিকটস্থ শাখা/সেল/সেন্টারের ঠিকানা পাবেন এই লিংকে 
  • bKash (merchant payment) বা নগদ (make payment) 01315393646 (Counter No. 1)
  • কোয়ান্টাম ডোনেট অ্যাপের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে সিলেক্ট করুন Qurbani Fund
  • ব্যাংক একাউন্টে # A/C – 108 120 0001850 # Quantum Foundation, Dutch-Bangla Bank PLC, Shantinagar Branch [প্রবাসীরাও এই একাউন্টে পাঠাতে পারবেন। SWIFT : DBBLBDDH, Routing No. 090276349]

এছাড়াও, আপনি অংশ নিতে পারেন কোরবানির মাংস বিতরণের কাজেও। আপনার নিকটবর্তী সেন্টার/শাখা/সেলের সাথে সংযুক্ত হয়ে সাধ্যমত এক বা দু’বেলা কিংবা এক বেলার একটি অংশ বিনিয়োগ করতে পারেন এই কল্যাণকর কাজে। অংশগ্রহণের জন্যে এই অনলাইন ফর্মটি (https://url.qm.org.bd/form/qurbani) পূরণ করুন। 

কোরবানির সামাজিকায়নে এই অংশগ্রহণ আপনার জীবনে বয়ে আনুক অফুরন্ত কল্যাণ।

দেখুন- কোয়ান্টামমে কোরবানির সামাজিকায়ন, ২০২৪ (Video)