published : ১৮ জুলাই ২০২৩
লাখে লাখে সৈন্য মরে, কাতারে কাতারে
শুমার করিয়া দেখি সাড়ে সাত হাজার!
সোনাভানের পুঁথির মতোই অবস্থা বর্তমানে দেশের সংবাদ শিরোনামগুলোর!
যা পড়লে আপনার মনে হতে পারে এই মুহূর্তে বুঝি ডেঙ্গু ছাড়া দেশে আর কিছুই নেই!
অথচ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা ২০২০, ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩-এর এখন পর্যন্ত যথাক্রমে ৭, ১০৫, ২৮১ এবং ৮৩। মানে সাড়ে তিন বছরে পৌনে পাঁচশ (৪৭৬)।
অন্যদিকে শুধু ধূমপানের কারণেই দেশে দৈনিক গড় মৃত্যু সাড়ে চারশ’!
অথচ যতখানি আতঙ্ক আর সংবাদ ডেঙ্গুকে নিয়ে, ধূমপান নিয়ে নেই তার ছিটেফোঁটাও
আর এই আতঙ্কের কারণেই হাসপাতালগুলোতে এখন উপচে পড়া ভিড়
ফলশ্রুতিতে ক্রিটিকেল ডেঙ্গুরোগী এবং অন্যান্য যেসব রোগীর প্রকৃতই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন তারা পড়ছেন ভোগান্তিতে
অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্রেফ বিশ্রাম বিশ্রাম আর ঘরোয়া যত্ন- এর মাধ্যমেই ভালো হয়ে যেতে পারে ডেঙ্গু।
ডেঙ্গু মূলত একটি ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাসজনিত জ্বর,
ডেঙ্গু মূলত একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। ছবিসুত্র : https://www.jugantor.com/lifestyle
টাইফয়েডসহ অন্যান্য সাধারণ জ্বরের সাথে এর মূল পার্থক্য হলো প্রথমদিন থেকেই জ্বর অনেক বেশি থাকে- ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত
সেই সাথে মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরের গিঁটে ব্যথা, চোখের পেছনে ও মাথায় ব্যথা, শারীরিক অবসাদ, বমি, শরীরের কিছু অংশে বিশেষত চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বাঁধা—এই লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন ডেঙ্গু হয়েছে!
লক্ষণ দেখা দেয়ার ৭২ ঘন্টার মধ্যে রক্ত পরীক্ষায় নিশ্চিত হতে পারেন ডেঙ্গু হয়েছে কিনা
১. পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিন
ভাইরাল ফিভারের মূল ওষুধই হলো বিশ্রাম
কারণ বিশ্রাম আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে রোগের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ তৎপর হওয়ার সুযোগ করে দেবে
তবে খেয়াল রাখবেন বিশ্রামের সময়টুকু যেন সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন গেম কিংবা অহেতুক নেট ব্রাউজের মতো সময় খাদকের পেটে না যায়!
বরং যদি কিছু শুনতেই হয়, তো কোয়ান্টাম অটোসাজেশন অডিও বা কোরআন মর্মবাণী বা নিজ নিজ ধর্মবাণী শুনতে পারেন।
২. পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ করুন
ডেঙ্গু রোগের অন্যতম প্রতিষেধক হচ্ছে হাইড্রেটেড থাকা। কারণ শরীরে যত পানির প্রবাহ থাকবে, ডেঙ্গু জটিলতার আশঙ্কা তত কমবে।
এজন্যে খাবার পানি তো খাবেনই, সেই সাথে ডাবের পানি, লেবু পানি, লেবু-গুড়ের শরবত, স্যুপ- ইত্যাদিও খেতে পারেন।
ডেঙ্গু রোগে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। ছবিসুত্র : https://www.dhakapost.com
অবশ্য বাজারের প্যাকেটজাত ফ্রুট জ্যুস খাবেন না, কারণ ওগুলোতে থাকা চিনি প্যাথোজেন বা রোগ সংক্রামক জীবাণুকে আরো শক্তিশালী করে
তাজা ফল, বিশেষত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন জাম্বুরা কমলা মাল্টা আমলকি, ডালিম, গাজর ইত্যাদি যেটা সহজলভ্য ভালোমত চিবিয়ে খান
এছাড়া তরলের আরেকটা সহজলভ্য কিন্তু পুষ্টিকর উৎস ডালের পানি। ডালের পানি খেতে পারেন
প্রয়োজন মনে করলে ওরস্যালাইনও খেতে পারেন
অর্থাৎ শরীর যাতে কোনোভাবেই ডিহাইড্রেটেড বা পানিশূন্য হয়ে না পড়ে।
৩. খেতে পারলে সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খান
প্রোটিনজাতীয় খাবার যেমন- চিকেন স্যুপ, মাছ ও ডিমের সাদা অংশ বেশি করে খান
এছাড়াও, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, শিমের বিচি এবং বাদাম খান
ভাত খান খুব নরম করে
সম্ভব হলে ঢেঁকিছাটা লাল চালের ভাত বা আতপ চালের জাউভাত খান
করলা ভাজি, ঝোল বা করলার জুস খেতে পারেন
আয়রনসমৃদ্ধ সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি খেতে হবে পর্যাপ্ত
৪. ওষুধ
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না
তবে জ্বর কমাতে ডাক্তাররা প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন
ডেঙ্গু হলে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
এ-ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ যদি চিকিৎসক পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কেবল তখনই খাবেন বা খাওয়াবেন, এছাড়া নয়।
সাধারণত ডেঙ্গু সংক্রমণের ৩য় বা ৪র্থ দিন থেকে জ্বর কমতে শুরু করে
তবে এ সময়টাতেই বেশি সতর্ক থাকতে হবে
কারণ কারো কারো ক্ষেত্রে এসময় ডেঙ্গু জটিলতা যেমন- ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বা হেমোরেজিকের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়
যেমন, তীব্র পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, বমি, শরীরের যে-কোনো জায়গা যেমন দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত অস্থিরতা
রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, শরীর হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে এলিয়ে পড়তে পারে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে
এরকম লক্ষণ দেখা গেলে এবং রক্তচাপ ঘন ঘন ওঠানামা করলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতলে নিয়ে যান
ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কমে গেলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ডেঙ্গু রোগীকে প্লাটিলেট দিতেই হবে বা প্লাটিলেট কাউন্ট কমে গেলেই আতঙ্কিত হতে হবে- ব্যাপারটা তা নয়।
প্লাটিলেট এমনকি ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, যদি রোগীর রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং একটু আগে যে জটিলতাগুলোর কথা বলা হলো, সেগুলো না থাকে
প্লাটিলেট দেয়া হচ্ছে না কেন বা দিতে হবে- রোগীর স্বজন হিসেবে ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর এজাতীয় চাপ সৃষ্টি করবেন না।
হেমারেজিক অবস্থা কেটে গেলে রোগীর প্লাটিলেট লেভেল এমনিতেই বাড়তে থাকবে
প্রাকৃতিক কিছু খাবার যেমন- এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী, বিট ও কচি গমের জুস প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়ায়
প্লাটিলেট বাড়াতে আরেকটি সহজলভ্য কিন্তু দারুণ কার্যকরী উপায় হলো পেঁপে পাতার রস
পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বাড়াতে দারুণ কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক খাবার
গবেষণায় পেঁপে পাতার রসে থাকা যে উপাদানটি প্লাটিলেট বাড়ায় বলে প্রমাণিত হয়েছে তা হলো এসিটোজেনিন (acetogenin)
এটি হলো একটি বিশেষ ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল
পেঁপে পাতায় আরো রয়েছে
-ফ্ল্যাভোনয়েড ও ক্যারোটিনের মতো প্রাকৃতিক উদ্ভিদজাত যৌগ
-কার্পেইন (Carpaine), এন্থ্রোকুইনাইন (anthraquinone) ও সাপোনিনসের (Saponins) সদৃশ্য অ্যালকালয়েড
-কারপোসাইড ও ট্যানিনের মতো কার্ডিয়েক গ্লাইকোসাইড, যা এন্টি-ইনফ্লামেটরি ও এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের জমাকৃত ফ্রি রেডিক্যালগুলোকে দেহকোষ থেকে বের করে দেয়
এ-ছাড়াও রক্তকোষকে সুরক্ষা দেয় এবং লোহিত কণিকার আবরণকে স্থিতিশীল রাখে
৩/৪টি তাজা পেঁপে পাতা ভালোভাবে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিন
এরপর একটি পাত্রে এক কাপ পানিসহ অল্প আঁচে ফুটাতে থাকুন
কয়েক মিনিট নাড়াচাড়ার পর মিশ্রণটি সবুজাভ রঙ ধারণ করলে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন
এই রস শিশুরা ৫-১০ মিলিলিটার এবং প্রাপ্তবয়স্করা ৩০ মিলিলিটার করে দিনে দুবার খাবেন
একবারে খেতে না পারলে ২/৩ ভাগে খেলেও অসুবিধা নেই
রসটা একটু তেতো স্বাদের, তাই খাওয়ার সুবিধার্থে এক চামচ মধু কিংবা আখ বা খেজুরের গুড় এবং সামান্য একটু বিট লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন
শুধু পেঁপে পাতার রসই না, ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে কাঁচা পেঁপের সালাদ এবং পাকা পেঁপেও বিশেষ উপকারি
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে পেঁপে কাচা বা পাকা যে কোন ভাবেই খাওয়া দারুন উপকারী।
ডেঙ্গু হলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরোয়া এই উপাদানগুলো নিয়ে ঘরেই ট্রিটমেন্ট নিন
পরম করুণাময়ের অশেষ অনুগ্রহে আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন