লিভার ড্যামেজের ৯ লক্ষণ, যা ৯০% মানুষ এড়িয়ে যায়!

published : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

মানবদেহের ২য় বৃহত্তম অঙ্গ হলো লিভার বা যকৃত। অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর মধ্যে এটিই বৃহত্তম। লিভার সারাদিন কতরকম কাজ করে জানলে অবাক হবেন। রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ছাঁকার মাধ্যমে রোজ আড়াইশ গ্যালনের বেশি রক্ত শোধন করে লিভার। 

এছাড়া, হজমের জন্যে প্রয়োজনীয় পিত্তরস উৎপাদন, গ্লাইকোজেন আকারে শর্করা জমা রাখা এবং প্রয়োজনে রক্তে ছেড়ে দিয়ে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখা, প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রোটিন প্রস্তুত, হরমোন এবং পুষ্টির লেভেল নিয়ন্ত্রণ- এমন প্রায় ৫০০ রকম কাজ করে থাকে লিভার।

মারাত্মক রোগ লিভার ড্যামেজ!  

দৈনন্দিন এই কাজগুলো করতে গিয়ে লিভারের যা ক্ষয়ক্ষতি হয় তা এটি নিজেই সারিয়ে তুলতে পারে। 

কিন্তু যখন আপনি ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস ও ভুল লাইফস্টাইলের মাধ্যমে লিভারের ওপর অত্যাচার একটু বেশিই করে ফেলেন তখন ভেঙে পড়ে এর সকল প্রতিরোধ। ফলাফল- লিভারের নানা অসুখবিসুখ, যার মধ্যে ভয়ঙ্কর হলো লিভার ড্যামেজ। এটি হয় যখন লিভার এত বেশিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে এটি আর যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না। 

ভয়ের ব্যাপার হলো, এই অবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ টেরই পান যে লিভার ড্যামেজ হচ্ছে! কিন্তু লিভার একবার ড্যামেজ হয়ে গেছে সেটা আর সারিয়ে তোলা যায় না এবং তা রূপ নিয়ে পারে লিভার ক্যান্সার, লিভার ফেইলিউর- এমনকি রোগী মারাও যেতে পারে।

কেন হয় লিভার ড্যামেজ?

বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে আছে-

  • এলকোহল গ্রহণ
  • স্থূলতা
  • অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া
  • হেপাটাইটিস 
  • পিত্তনালী বন্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন রোগ
  • ক্রনিক হার্ট ফেইলিউর
  • কিছু ওষুধ, বিশেষত ব্যথানাশক ওষুধ এবং কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘমেয়াদে খেলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে

লিভার ড্যামেজ বুঝবেন কীভাবে?

১. জণ্ডিস: লিভার ড্যামেজের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো লক্ষণ হলো জণ্ডিস, যার প্রভাবে রোগীর চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যায়। এটি হয় রক্তে অতিরিক্ত বিলিরুবিনের কারণে। 

২. অল্পতেই রক্তপাত : লিভার রক্ত জমাট বাঁধার প্রোটিন তৈরি করে। তাই যখন এটি ঠিকমতো কাজ করে না, তখন অল্প আঘাতেই রক্তপাত হয়, ত্বকে নীলচে দাগ দেখা দেয়। কখনো কখনো দাঁত ব্রাশ করার সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে।

৩. পেট ফোলা : লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হলে পেটে পানি জমে পেট ফুলে যেতে পারে। এছাড়াও পেটে অস্বাভাবিক ব্যথা, ভেতরে চাপ পড়ার অনুভূতি হয়।

৪. ঘুম ঘুম ভাব : অনেক ক্ষেত্রে রোগী অতিরিক্ত ঘুম ঘুম অনুভব করেন। ঘুমের রুটিন নষ্ট হয়ে যায় এবং সারাক্ষণ ঘুম পেতে থাকে।

৫. ক্ষুধামান্দ্য : লিভার দুর্বল হয়ে পড়লে খাবার ঠিকমত হজম হয় না। এতে দেখা দেয় অরুচি বা ক্ষুধামান্দ্য, বমিভাব। সামান্য খেলেও পেট ভার ভার লাগে। 

৬. সারাক্ষণ ক্লান্তি ও দুর্বলতা : আপনি যদি হঠাৎ করে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন, তবে এটি লিভার ড্যামেজের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। কারণ লিভারের সমস্যার কারণে শরীরে গ্লুকোজের উৎপাদন কমে যায়, যা শরীরে ক্লান্তি এবং দুর্বলতার সৃষ্টি করে। এতটাই দুর্বল লাগে যে রোগী দৈনন্দিন কাজ করার মতো এনার্জিও হারিয়ে ফেলেন।

৭. কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস : লিভারে সমস্যা থাকলে খাবারের স্বাদ না পাওয়া, খিদে কমে যাওয়া, এবং শরীরের পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় দ্রুত ওজন কমতে থাকে।

৮. বিভ্রান্তিবোধ : লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটি রক্তে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ শোধন করতে পারে না। পরিণামে সেগুলো মস্তিষ্কে জমে brain fog বা মাথা ঝাপসা লাগা, বিভ্রান্তিবোধ, স্মৃতিবিভ্রম ইত্যাদি হতে পারে।  

৯. রক্তবমি ও মলের রঙ পরিবর্তন : এছাড়া, রক্তবমি ও মল ফ্যাকাশে অথবা মেটে রঙের হতে পারে।  

এই লক্ষণগুলো টানা কয়েকদিন থাকলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারে শরণাপন্ন হোন।  

প্রতিরোধই উত্তম

লিভার ড্যামেজ যেহেতু প্রারম্ভিক অবস্থায় বোঝা কঠিন এবং হয়ে গেলে পরিণতি মারাত্মক- তাই আপনাকে মনোযোগ দিতে হবে লিভার সুস্থ রাখার দিকে। এজন্যে কিছু সাধারণ করণীয়ঃ

  • ধূমপান, এলকোহল ও মদ্যপান পুরোপুরি বর্জন করুন
  • এন্টিবায়োটিক ও পেইন কিলারসহ কোনো ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না
  • সময়মত হেপাটাইটিস এ ও বি’র টিকা নিন
  • পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন হেপাটাইটিস সি আছে কিনা 
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • শাকসবজি, ফলমূলসহ স্বাস্থ্যকর খান এবং চর্বিযুক্ত খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন
  • কাঁচা বা অর্ধসেদ্ধ মাছ-মাংস খাবেন না

এছাড়া, লিভার ইনফেকশন থেকে বাঁচতে দূষিত খাবার ও পানি এড়িয়ে চলুন। রাস্তাঘাটে বিক্রি করা আখের রস, শরবৎ, জুস ইত্যাদি যত কম খান তত ভালো। 

আর ময়লা স্পর্শ করার পর বা বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করুন।