published : ২৪ নভেম্বর ২০২৪
নানা পুষ্টিগুণে ধন্য হওয়ায় বিটকে বলা হয় সুপারফুড। এর আসল নাম বিটরুট। তবে সাধারণ্যে বিট নামে সমধিক পরিচিত।
বিট প্রধাণত তিন ধরনের হয়- সাদা, হলুদ এবং গাঢ় লাল রঙের। তবে আমাদের দেশে যে বিটটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সেটি হলো লাল বিট।
বিটের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে। যেমন- বিটা সায়ানিন। বিটের এই উপাদানটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এন্টি-ক্যানসার এজেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। বিশেষ করে ইউরিনারি ব্লাডার ক্যান্সার।
এছাড়াও, বিটে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এজেন্ট বিটা লেইন। এটি শরীরের প্রদাহ, হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
আপনি যখন বিট খাবেন তখন এই নাইট্রেটস আপনার শরীরে গিয়ে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হবে। অজস্র গবেষণার আলোকে বিজ্ঞানীরা নাইট্রিক অক্সাইডকে বলছেন ‘মিরাকেল মলিকুল’।
আমাদের রক্তনালীর ভেতরের গায়ের মাঝখানে খুব ছোট ছোট মাংস পেশীর একটা স্তর আছে। এগুলোকে বলা হয় স্মুথ মাসল। এরা নরম পাইপের মতো নমনীয়। তবে অত্যধিক টেনশন, বেশি বেশি তৈলাক্ত চর্বিযুক্ত ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া ইত্যাদি কারণে এগুলো হয়ে যায় শক্ত প্লাস্টিক বা লোহার পাইপের মতো শক্ত। যার পরিণতি উচ্চ রক্তচাপ। আর উচ্চ রক্তচাপ মানে হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকি। স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়ে সমানতালে।
বিটের নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালীর মাংসপেশীকে শিথিল করে। নিয়মিত বিট খেলে পেশীগুলো ধীরে ধীরে নমনীয় হয়ে ফিরে যাবে আগের অবস্থায়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আপনি প্রতিরোধ ও নিরাময় করতে পারবেন হৃদরোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক।
এছাড়াও বিটের নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালির পেশিগুলোর ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে দেবে। ফলে আপনি ক্লান্তিহীন বিরামহীন কাজ করতে পারবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
বলা হয় ‘পেট ফিট তো মাথা ফিট’! কারণ আমাদের পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে অবস্থান করছে আমাদের ইমিউন সিস্টেমের ৭০ ভাগ উপাদান। মস্তিষ্কের বাইরে একমাত্র নার্ভাস সিস্টেমের অবস্থান আমাদের পরিপাকতন্ত্রে। অতএব দেহের সার্বিক সুস্থতায় পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিট-এ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো এসিড আছে, যার নাম গ্লুটামিন। গ্লুটামিন পরিপাকতন্ত্রের ফিটনেস বাড়ায় এবং এর কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, বিটে আছে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ। আঁশ পরিপাকতন্ত্রের ফিটনেস বাড়ায়।
পরিপাকতন্ত্রের ভিতরে কোটি কোটি অণুজীব আছে, যাদের মধ্যে কিছু উপকারী আর কিছু ক্ষতিকর। উপকারী অণুজীবগুলো যখন সংখ্যায় বেশি থাকবে আর ক্ষতিকরগুলো কম তখন আপনি সুস্থ থাকবেন।
পরিপাকতন্ত্রের উপকারী অণুজীবগুলোকে বলে প্রোবায়োটিক্স। সুস্থ থাকতে চাইলে এদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, সুস্থ সতেজ রাখতে হবে। এজন্যে এগুলোর জন্য নিয়মিত খাবার পাঠাতে হবে। অণুজীবের খাবারকে বলে প্রিবায়োটিক্স। বিট একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রিবায়োটিক্স।
তাই আপনি যদি নিয়মিত বিট খান তাহলে পরিপাকতন্ত্রের অণুজীবগুলো সুস্থ থাকবে। ফলে আপনার পেট চমৎকার কাজ করবে। এতে সুন্দরভাবে কাজ করবে আপনার মাথা এবং প্রকারান্তরে পুরো শরীর।
আমাদের কোষের মধ্যে প্রতিনিয়ত টক্সিন বা বর্জ্য জমা হয়। এগুলোকে বলে ফ্রি-রেডিকেল। শরীরের সুস্থতায় টক্সিনগুলো দূর করা অত্যাবশ্যক। আর এজন্যে প্রয়োজন এন্টি-অক্সিডেন্ট।
শরীরের ফ্রি-রেডিকালগুলো বের করার জন্যে হয় আপনার শরীরে এন্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি হতে হবে, অথবা বাইরে থেকে দিতে হবে। বিশ্বের ১০টি শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সবজির মধ্যে একটি হলো বিট। কাজেই বিট খেলে এর এন্টি-অক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে করবে টক্সিনমুক্ত।
বিট আপনি ৪ ভাবে খেতে পারেন-
১. জুস হিসেবে
২. সালাদ হিসেবে; ওপরের খোসা বাদ দিয়ে টুকরো টুকরো করে শসা, টমেটো, গাজর ইত্যাদির সাথে সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়।
৩. রোস্ট করে
৪. স্যুপের সাথে
তবে বিট যেহেতু একটু বিস্বাদ, তাই দিনের পর দিন কাঁচা খেয়ে যাওয়াটা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে সহজ সমাধান জুস করে খাওয়া।
খুব সহজ! প্রথমে বিট ধুয়ে খোসা ছিলে নিন। টুকরো টুকরো করে কাটুন। এরপর পরিমাণমতো পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন। ছেঁকে ফেলবেন না। কারণ ছাঁকলে বিটের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান চলে যাবে। খাওয়ার সুবিধার্তে মিহি ব্লেন্ড করতে পারেন।
স্বাদের জন্যে জুসে গুঁড় বা মধু, বিট লবণ, জিরার গুঁড়া মেশাতে পারেন।
এভাবে জুস বানিয়ে প্রতিদিন এক গ্লাস খান। দিনের যে-কোনো সময় খেতে পারেন। তবে সকালে খাওয়াই উত্তম। তাহলে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ পানীয় পানের মাধ্যমে শুরু হবে আপনার দিন! উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের পাশাপাশি নীরোগ ঝরঝরে হবে আপনার দেহ, আপনি লাভ করবেন সুস্থতার অনাবিল আনন্দ।