published : ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ডিম যে অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার এ-বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। তবে সবাই, বিশেষত হৃদরোগী বা উচ্চ কোলেস্টেরলের রোগীরা ডিম খেতে পারবে কিনা এই নিয়ে আছে সংশয়। আবার কেউ কেউ দিনে ডিম খান ২/৩/৪টা করে।
এই আর্টিকেলে আমরা ডিমের পুষ্টিগুণ এবং কীভাবে ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত এই বিষয়ে জানব।
একটা বড় আকারের মুরগির ডিমে রয়েছে প্রোটিন ৬ গ্রাম, এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড ৯টি, কোলেস্টেরল ১৮৬ মিলিগ্রাম। ভিটামিন আছে অনেক ধরণের- এ, ডি, ই, বি-২, বি-৫ বি-৬ এবং বি-১২।
আছে অনেকগুলো মিনারেল যার মধ্যে অন্যতম হলো আয়রন, ফলিক এসিড, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, আয়োডিন, কপার, জিংক, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও সালফার।
এতকিছু থাকার কারণে এখনকার পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডিম একটি সুপার ফুড!
ডিম চোখের জন্যে খুবই ভালো। সূর্যের রশ্মিতে থাকা অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চোখকে রক্ষা করে ডিম। এছাড়াও, ডিমে রয়েছে ল্যুটিন এবং জিয়াক্স্যানথিন নামে দুটি উপাদান, যা চোখের সুস্থতা বাড়ায়।
এছাড়াও ডিমের কুসুমে রয়েছে স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী কোলিন, যা গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে। এজন্যে প্রসূতি মায়েদের রোজ একটি করে ডিম খেতে বলা হয়।
সুস্থতার জন্য ইমিউন সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিমে রয়েছে পর্যাপ্ত এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধেও সাহায্য করে ডিম।
আর আধুনিক সময়ের যে স্বাস্থ্য মহামারি ক্যান্সার, এটা প্রতিরোধেও ডিম সহায়ক।
এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে, যার সারমর্ম হলো, প্রতিদিন ডিম খাওয়ার পরও ৭০ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়ে না। ৩০ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে বাড়ে, তবে অল্প মাত্রায়।
হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং-এর চীফ মেডিকেল এডিটর ড. হাওয়ার্ড ই লেউইন হার্ভার্ডে যত গবেষণা হয়েছে সেগুলোকে সাম-আপ করে বলছেন, “ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়ায় মূলত Saturated Fat। খাবারের ভেতরে যে কোলেস্টেরল থাকে এটি রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ায় না।”
এজন্য হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীদের অভিমত, আপনি প্রতিদিন নিশ্চিন্তে কুসুমসহ ডিম খেতে পারেন, তবে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৭টি। অর্থাৎ, প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১টি।
আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনও তা-ই বলছে, প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১টি ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত।
কাজেই যদি আপনার কোলেস্টেরল ঠিক থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এ-জাতীয় রোগ না থাকে তাহলে নিশ্চিন্তে কুসুমসহ ১টি ডিম খান প্রতিদিন।
আর যদি আপনার উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস থাকে তবে ডিমের শুধু সাদা অংশ খান। কুসুমটা বাদ দিতে পারেন বা কুসুমের বড়জোর অর্ধেক খেতে পারেন।
সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে দেশি মুরগির ডিম। কিন্তু দেশি মুরগির ডিম এখন পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। ফার্মের মুরগির ডিম ছাড়া উপায় নেই! সেক্ষেত্রে ফার্মের অর্গানিক ডিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। নিশ্চিত হোন যে এটি একটি অর্গানিক ডিম, অর্থাৎ মুরগিকে অর্গানিক ফুড খাওয়ানো হয়।
কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। এটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। কোয়েল পাখির ডিম যেহেতু ছোট, আপনি প্রতিদিন ৩/৪টা ডিম খেতে পারেন।
এভাবে প্রতিদিন পরিমিত ডিম খাওয়াকে যদি অভ্যাসে পরিণত করেন তাহলে আপনি ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে সুস্থ, কর্মময়, দীর্ঘজীবনের দিকে এগিয়ে যাবেন।