ডিজিটাল অ্যামনেশিয়া॥ সচেতনতার বিকল্প নেই

published : ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর ফোন নম্বরটা চট করে বলুন তো! কিংবা ভাবুন তো প্রিয়জনদের মধ্যে কজনের জন্মদিন-বিবাহবার্ষিকীর তারিখ মনে আছে আপনার! কিছুক্ষণ মাথা চুলকে যদি টের পান যে, এসব তথ্য আগে আরো বেশি মনে রাখতে পারতেন, তবে অবাক হবেন না। এমনটাই কি হওয়ার কথা নয়? এসব মনে রাখার ভার যে আমরা বহুদিন হলো ছেড়ে দিয়েছি আমাদের প্রিয় সেল ফোনটির মেমোরি কার্ডের ওপর।

পরিচিত কোনো শব্দের বানান নিয়ে খটকা জাগলে মস্তিষ্ককে চিন্তা করার অবকাশটুকুও এখন আর দেই না আমরা। গুগল আছে না! মুহূর্তেই সে জানিয়ে দিচ্ছে সঠিক বানান। এর ফলে নিজেদের অজান্তেই আমরা শিকার হচ্ছি এক অদ্ভুত ধরনের স্মৃতিভ্রষ্টতার। হালের গবেষকরা একে অভিহিত করেছেন ‘ডিজিটাল অ্যামনেশিয়া’ নামে।

আধুনিক নাগরিক জীবনে এই স্মৃতিভ্রষ্টতা ছড়িয়ে পড়ছে দাবানলের মতো। ইন্টারনেট কম্পিউটার মোবাইলসহ নানাবিধ প্রযুক্তিপণ্যের ওপর অহেতুক নির্ভরতা দুর্বল করে ফেলছে আমাদের স্মৃতিশক্তিকে। ইউরোপের আটটি দেশের ছয় হাজার মানুষের ওপর দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে একথা জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কি ল্যাব।

গবেষণায় দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি মানুষ তাদের শৈশবের ল্যান্ডফোন নম্বরটি দিব্যি স্মরণ করতে পারছেন। অথচ তার পরিবারের সদস্যদের কিংবা নিজ কর্মস্থলের নম্বর বলতে পারছেন না। প্রতি তিন জনের একজন স্বীকার করেছেন যে, ফোনবুক না দেখে সন্তানের স্কুলে তো দূরের কথা, তিনি তার স্বামী/স্ত্রীকেও ফোন করতে পারবেন না। আর অনলাইনে পাওয়া একটি তথ্য ব্যবহার করার পরপরই তা ভুলে যান অন্তত ২৫ শতাংশ মানুষ।

বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. মারিয়া উইম্বার বলেন, ‘মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি গঠনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে সেলফোন ও কম্পিউটারে তথ্য খোঁজার প্রবণতা। সাধারণত কোনো তথ্য যদি আমরা স্মৃতি থেকে উদ্ধার করি, মস্তিষ্ক সেটাকে আরো দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপ দেয়। কিন্তু একই তথ্য বার বার ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করলেও তা সমান উপকারিতা দেয় না। পর্দায় আঙুল চেপে তথ্যটি যেমন দ্রুত পাচ্ছি, ততোধিক দ্রুততার সাথে তা আবার স্মৃতি থেকে মুছে যাচ্ছে।’

ডিজিটাল অ্যামনেশিয়ায় ক্রমশ আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সের মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাজেটের প্রতি আসক্তি মানুষকে নির্বোধে পরিণত করছে। প্রিয় গ্যাজেট বা অ্যাপ যতক্ষণ কাজ করছে, ততক্ষণ সে সকল কাজের কাজী। আর যদি কোনো কারণে সেটি না ঘটে, তখন সে হতবুদ্ধি হয়ে যায়। তখন বোঝা যায়, যন্ত্র-নির্ভরতা কেবল সহজাত দক্ষতাই কমায় নি, সেইসাথে কমন সেন্স বা সহজাত বিচারবুদ্ধিও হ্রাস করেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

তাই প্রিয় পাঠক, ইন্টারনেট ও প্রযুক্তিপণ্যের যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বাঁচুন অকালে স্মৃতিনাশের খপ্পর থেকে।