published : ৮ এপ্রিল ২০১৭
মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট একবার বলেছিলেন, জীবনে একটি ভুলও করে নি এমন মানুষকে যদি খুঁজে বের করতে হয়, তাহলে সেই মানুষকেই শুধু পাবে যে জীবনে কোনো কাজও করে নি।
অর্থাৎ আপনি ভুল করছেন মানে আপনি কাজ করছেন। আপনার জীবনে কোনো ভুল নেই মানে আপনার জীবনে আসলে কোনো কাজও নেই!
আবার এই কাজ এবং কাজের ভুল থেকে দারুন দারুন ঘটনাও ঘটে যেতে পারে আপনার জীবনে যা এমনকি সভ্যতার জন্যেও হয়ে উঠতে পারে কালজয়ী ঘটনা। যেমন, পেনিসিলিন। জীবনদায়ী এই ওষুধের কথা আমরা কে না জানি। বর্তমান পৃথিবীতে সংক্রামক রোগ এবং তাতে মৃত্যুহার যে অসাধারণভাবে কমেছে, তাতে পেনিসিলেনের একক অবদান, বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না।
এই পেনিসিলিন কীভাবে আবিষ্কার হয়েছিল জানেন? ভুল করে।
লন্ডনের সেন্ট ম্যারি হাসপাতালের যে গবেষণাগারে আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং কাজ করতেন, একদিন তিনি দেখেন ব্যাকটিরিয়া কালচারের জন্যে ব্যবহৃত কাচের জারটা ভুল করে কেউ খুলে রেখেছে ল্যাবরেটরির পাশের বেজমেন্টে। আর খোলা জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশের সাথে মিলে ঐ জারে রাখা স্টেফিলোকক্কাসের (এক ধরনের ব্যাকটিরিয়া) ওপর নীল-সবুজ রঙের এক ধরনের পদার্থ জমেছে। ফ্লেমিং লক্ষ করলেন নীল-সবুজ এই পদার্থটা যেন এক ধরনের আবরণ তৈরি করেছে স্টেফিলোকক্কাসের ওপর। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি। ব্যস, এভাবেই আবিষ্কার হলো পেনিসিলিন!
শুধু পেনিসিলিনই না, অনেক মজার মজার জিনিসও আবিষ্কার হয়েছে ভুল করে। যেমন, পটোটো চিপস।
১৮৬৩ সালে আমেরিকার নিউইয়র্কের এক রেস্তোরাঁয় খেতে এসেছিলেন এক খুঁতখুঁতে কাস্টমার। অর্ডার দিয়েছিলেন ভাজা আলুর। কিন্তু ওয়েটার যখন সেই আলু এনে রাখল তার সামনে, ভাজা আলুর মোটা টুকরো দেখে মেজাজটাই চড়ে গেল তার। সাথে সাথে রান্নাঘরে ফেরত পাঠালেন সেটা। বললেন, আলুর টুকরোগুলো আরো চিকন করে আনতে।
পরের বারও হলো না। আবারো ফেরত পাঠালেন।
এভাবে দুতিনবার হওয়ার পর বাবুর্চি জর্জ ক্রামেরও রোখ চেপে গেল। যেভাবেই হোক আলুর টুকরো চিকন করতেই হবে। সাধ্যমতো সবচেয়ে চিকন করলেন। কড়া করে ভাজলেন। আর তারপর লবণ ছিটিয়ে পাঠালেন ক্লায়েন্টের কাছে। ব্যস, এবার ক্লায়েন্ট খুশি। হয়েছে তার মনমতো ভাজা। আর এভাবেই তৈরি হলো আজকের জনপ্রিয় পটেটো চিপস।
আসলে ভুল করে একজন প্রোঅ্যাকটিভ মানুষ ভুলটাকে শেখার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন। পরের বার সচেতন থাকেন যাতে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়।
কিন্তু একজন রিঅ্যাকটিভ মানুষ ভুল করে হয় এত বেশি অনুশোচনায় ডুবে যায় যে তার পক্ষে নুতন কোনো উদ্যোগ আর গ্রহণ করাই সম্ভব হয় না। অথবা সে ভুল থেকে শেখেই না। বার বার একই ভুল করতে থাকে। ‘ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়’ প্রবাদটা বহুল প্রচারিত হলেও বাস্তবতা হলো, ন্যাড়া বার বারই বেলতলায় যায়।
তাই আসুন ভুল এবং কাজের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলো জেনে নেয়া যাক-
১. ভুল হলে সাথে সাথে স্বীকার করুন। নিজের কাছে এবং আপনার এই ভুলের কারণে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তার কাছে। সম্ভব হলে ক্ষতিপূরণ করুন। মনে রাখবেন, ভুল স্বীকার করার মধ্য দিয়ে আপনি আপনার সাহস, দায়িত্ববোধ ও সততার পরিচয় দিলেন, যা অন্যের কাছে আপনার মর্যাদাকে বাড়াবে বৈ কমাবে না।
২. আপনার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে এমন মানুষদের প্রতি ভেতরে বা বাইরে কোনো ক্ষোভ রাখবেন না। ভালো কথা বা প্রশংসা তো বেশিরভাগ মানুষের কাছ থেকেই পাচ্ছেন। কিন্তু সেটা থেকে আপনার শেখার কিছু নেই। কিন্তু গঠনমূলক সমালোচনা যদি কেউ করতে পারে, তো সহজভাবে নিলে সেটাই আপনার শেখার একটা বিরল সুযোগ।
৩. ভুলকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করুন। দেখুন কোন কোন পরিস্থিতিতে এই ভুলগুলো হলো। পরের বার এই অবস্থাগুলো বদলে নিন। সচেতন হয়ে যান এ সময়গুলোতে।
আসলে মূল বিষয়টি হলো কাজ করতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে। ভুল হয়তো কিছু হবে, কিন্তু সে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা) এর একটি বাণী এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম বলতে গিয়ে ইজতিহাদ করে, আর তার ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদে ভুল হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৭৬]