ডিসট্র্যাকশন কমানোর উপায়

published : ২৪ মে ২০২৩

ডিসট্র্যাকশন কী?

ধরুন, কোনো কাজ করতে বসেছেন, এমন সময় সামনে থাকা মোবাইল ফোনের নোটিফিকেশন বেজে উঠল।

কী নোটিফিকেশন তা দেখতে গিয়ে কীভাবে যেন অনেকটা সময় ফোনের পেছনেই চলে গেল! যেই সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করবেন ভেবেছিলেন, তা আর করতে পারলেন না।

অথবা মিটিং-এ আছেন, কিন্তু অপরপক্ষের কথা শুনতে শুনতে কখন যে মন অন্যদিকে চলে গেছে, তা টেরই পেলেন না! এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা শুনতে মিস হয়ে গেল।


ডিসট্র্যাকশনে মিস হয়ে যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অনেককিছুই (ছবিসূত্র : www.theladders.com)

মনোযোগ প্রয়োগের সময় মনের এই বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়াই, ডিসট্র্যাকশন।

ডিসট্র্যাকশনের ধরন সাধারণত দুই প্রকার

ডিসট্র্যাকশন হতে পারে বাহ্যিক কোনো কারণে অথবা নিজের মনোযোগের অভাবের কারণে।

প্রথম ঘটনায় মোবাইল ফোন অর্থাৎ, কোনো বাহ্যিক কারণে আপনি ডিসট্র্যাক্টেড হয়ে গেলেন।

কিন্তু, দ্বিতীয় ঘটনায় বাহ্যিক কোনো উপকরণ ছাড়াই আপনি নিজের মনেই ডিসট্র্যাক্টেড হয়ে গেলেন।

ডিসট্র্যাকশনের মূল কারণ কী?

ডিজিটাল ডিভাইসের এই যুগে ‘ডিজিটাল ডিসট্র্যাকশনই’ মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করে দেওয়ার অন্যতম কারণ।

আর ক্রমাগত ডিসট্র্যাক্টেড হতে থাকলে, এর পরিণতিতে কমতে থাকে যে-কোনো বিষয়ে আপনার মনোযোগ ধরে রাখারই ক্ষমতা।


ডিসট্র্যাকশনের অন্যতম কারণ ডিজিটাল ডিভাইসের অতি ব্যবহার (ছবিসূত্র:www.coe.int)

ডিসট্র্যাকশন কমানোর ১০টি সহজ উপায়

কোনো কাজে একনিষ্ঠ মনোযোগ ধরে রাখার জন্যে প্রথমেই প্রয়োজন, ডিসট্র্যাকশনের কারণ হতে পারে এমন উপকরণগুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা।

এজন্যে নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করলে আপনিও উপকৃত হতে পারেন।

১. অগোছালো পরিবেশে মন সহজেই বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাই পড়ার বা কাজের জায়গাটিকে সবসময় পরিপাটি রাখুন। মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন উপকরণগুলো চোখের সীমানা থেকে দূরে রাখুন।

২. পড়ার সময় বা জরুরি কাজ করার সময় মোবাইল ফোন বন্ধ রাখুন।

আর তা সম্ভব না হলে ফোন সাইলেন্ট মোডে অথবা ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোডে রাখতে পারেন। আরও ভালো হয় যদি অন্য কোনো ঘরে ফোন রেখে দিতে পারেন।

৩. সকালে ঘুম ভেঙে প্রথমেই স্মার্টফোনে নোটিফিকেশন চেক করার অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।

দিনের প্রথম কাজটাই যখন হয় অন্যের মেসেজ, ইমেইল বা নিউজ চেক করা, তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি তাড়না অনুভব করেন লাইক-কমেন্ট-শেয়ার অথবা রিপ্লাই দেওয়ার। আপনার দিন শুরু হয় ডিসট্র্যাকশন ও রি-অ্যাকটিভ আচরণের মধ্য দিয়ে।

৪. প্রতিদিন অন্তত কয়েক ঘন্টা সময় সম্পূর্ণভাবে স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকার চর্চা করুন। খুব ভালো হয় যদি সময়টা দিনের প্রথম ৩-৪ ঘন্টা হয় অথবা যেই সময়ে আপনি সবচেয়ে কর্মোদ্যম থাকেন তখন। যেন দিনের সবচেয়ে প্রোডাকটিভ সময়ে আপনি ডিসট্র্যাকশন ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এগিয়ে ফেলতে পারেন।

৫. ডিজিটাল ডিসট্র্যাকশন থেকে মুক্তি পেতে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস ফোন থেকে মুছে ফেলুন। প্রয়োজনে সোশ্যাল-মিডিয়া অ্যাপস যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে তা ফোনে নয় বরং কম্পিউটারে ব্যবহার করুন। প্রয়োজনীয় অ্যাপস ব্যবহারেও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে নিন।

৬. অন্যের সাথে কথা বলার সময় বা কথা শোনার সময় মোবাইল ফোন চেক করবেন না। সামনের ব্যক্তিকে পুরো মনোযোগ ও সম্মান দিন।

৭. অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় ব্যস্ত আছেন এমন কোনো সাইন রাখতে পারেন যেন কাজের সময় কেউ অহেতুক এসে ব্যাঘাত না ঘটান।

৮. কাজের মাঝখানে বার বার ইমেইল ও নোটিফিকেশন চেক করবেন না। ইমেইল ও নোটিফিকেশন চেক করা বা রিপ্লাই করার জন্যে একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখুন।

৯. দিনের শুরুতেই সারাদিনের কাজের তালিকা তৈরি করুন। কোন কোন কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই ক্রমানুসারে কাজগুলোকে সাজিয়ে নিন। তুচ্ছ কাজগুলোকে তালিকার শেষের দিকে রাখুন।

এবারে তালিকার শুরু থেকে মনোযোগ দিয়ে কাজ শুরু করুন যেন তুচ্ছ কাজগুলোর ডিসট্র্যাকশন থেকে দূরে থাকতে পারেন।

১০. ডিসট্র্যাকশন কমানোর জন্য মনোযোগ বাড়ানোর কিছু টেকনিকও চর্চা করতে পারেন। ২ মিনিট মনোযোগের অনুশীলনী, কোয়ান্টাম ব্যায়াম ও মেডিটেশন চর্চা আপনাকে ধীরে ধীরে মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।