published : ৮ ডিসেম্বর ২০২২
Meditation এবং Medicine দুটো শব্দই এসেছে গ্রীক শব্দ Mederi থেকে। Mederi শব্দের অর্থ হচ্ছে নিরাময়। আর Medicine এবং Meditation দুটোই ব্যবহৃত হয় নিরাময়ের কাজে।
মেডিসিন নিরাময় করে দৈহিক অসুবিধা। আর মেডিটেশন নিরাময় করে দেহমনের সকল অসুবিধা।
মন সেরা ডাক্তার দেহ সেরা ফার্মেসি
এককথায় ব্রেনের কুলিং সিস্টেম এবং মাইন্ডের ক্লিনিং সিস্টেম।
একজন মানুষ যখন মেডিটেশন করে তার মাথা ঠান্ডা হয়, মন স্বচ্ছ হয়। রাগ ক্ষোভ ঘৃণা- যেগুলোকে বলা হয় ‘মনের আবর্জনা’ তা দূর হয়।
মেডিটেশন মস্তিষ্ককে ঠান্ডা এবং মনকে দূষণমুক্ত করে
আর রাগ-ক্ষোভ কমে গেলে মানুষটির পক্ষে শান্তভাবে বস্তুনিষ্ঠ থেকে যে-কোনো পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করার মতো সামর্থ্য সৃষ্টি হয়। সমস্যার মূল কারণকে তিনি বের করতে পারেন এবং সমাধানের পথে এগোতে পারেন।
এজন্যেই বলা হয়, সমস্যা + টেনশন = সংকট। আর সমস্যা + মেডিটেশন = সমাধান
মেডিটেশন করা খুবই সহজ। যে-কোনো বয়স, যে-কোনো ধর্মবিশ্বাস, যে-কোনো জনপদের মানুষই নিজে নিজে শিখে চর্চা করতে পারেন এই মেডিটেশন।
আর কোয়ান্টাম মেথড মেডিটেশন একটি বৈজ্ঞানিক মেডিটেশন পদ্ধতি যা বিশ্বের অন্যতম সহজ, কার্যকরী এবং ফলপ্রসূ মেডিটেশন পদ্ধতি। মেডিটেশন করার নিয়ম বা ধাপগুলো এখানে বর্ণিত হলো।
ধাপগুলো শিখে নিজে নিজে করতে পারেন। আবার সহযোগিতা নিতে পারেন অডিও গাইডের।
Quantum Method app
মেডিটেশনের জন্যে একটি নিরিবিলি ঘর বেছে নিন। নিশ্চিত হোন এসময় কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। ঘরে হালকা আলো থাকবে। পর্যাপ্ত বাতাস থাকবে।
মেডিটেশনের সময় আপনার পোশাক হবে ঢিলেঢালা আরামদায়ক। যারা চশমা পরেন চশমা খুলে নেবেন। হাতে ঘড়ি থাকলে তাও খুলে নিন।
মোবাইল ফোন অফ করে দিন। ল্যান্ডফোন, ইন্টারকম বা আইপি ফোন থাকলে সাইলেন্ট মোডে দিয়ে রাখুন।
মেডিটেশন আপনি মেঝেতে মাদুর পেতে বা কার্পেটে বসে করতে পারেন।
বঙ্গাসন, বজ্রাসন, পদ্মাসন, সুখাসন বা যে-কোনো ধ্যানাসনেই আপনি মেডিটেশন করতে পারেন।
আসলে যেভাবে বসে আপনি আরাম পান মেডিটেশনের জন্যে সেভাবে বসুন।
অথবা চেয়ারেও আরাম করে সোজা হয়ে বসতে পারেন। চেয়ারে বসলে জুতো-মোজা খুলে নিন। প্যান্টের বেল্ট একটু ঢিলে করে নিন।
চেয়ারে বসলে এমনভাবে বসবেন যাতে পায়ের পাতা ও আঙ্গুল মেঝে স্পর্শ করে। হাতের তালু যেন থাকে হাঁটুর ওপর। মেরুদণ্ড, ঘাড় থাকবে সোজা।
চেয়ার ছাড়ুন, বঙ্গাসনের অভ্যাস গড়ুন
মেডিটেশনকে বলা হয় নিজের বাড়িতে ফেরার আনন্দ। মেডিটেশন গিয়ে তাই মনের জন্যে আমরা একটি মনোরম ও প্রশান্তিময় বাড়ি বানাব।
মনের বাড়িতে যাওয়ার পথে থাকবে আলফা স্টেশন। যেমন আমরা যখন কোথাও যাই, তখন বাস স্টেশন নয়তো ট্রেন স্টেশন বা লঞ্চ স্টেশন হয়ে যাই, আলফা স্টেশনও তেমনি
একটি সুন্দর স্থান যেখানে আছে ঘন বন, ঝর্না, লেক, বাগান ও একটি ওয়েটিং রুম।
মনের বাড়ি আপনার পছন্দমতো যে-কোনো শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে হতে পারে।
কখনো হয়তো কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলেন। দেখে খুব ভালো লেগেছিল। মনে হয়েছিল- আহ! এত সুন্দর জায়গায় যদি আমি থাকতে পারতাম! বা ভিডিওতে কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মন উৎফুল্ল হয়েছিল। মনে হয়েছিল- এত চমৎকার জায়গায় যেতে পারলে কতই না ভালো লাগত!
অথবা এ পরিবেশ আপনি কল্পনা দিয়েও গড়তে পারেন। কোনো পাহাড়ের চূড়ায়, হ্রদের মাঝে, ঝর্না-জলপ্রপাত বা কোনো গভীর বনে, নদী বা লেকের পাড়ে, দিগন্তবিস্তৃত তৃণভূমি বা সমুদ্র সৈকতে অথবা সমুদ্রের তলদেশে অথবা মহাকাশে। যে-কোনো জায়গায়ই আপনি এই পরিবেশটি কল্পনা করতে পারেন।
আপনার নিজের বাড়ি যদি খুব পছন্দের হয় ওই বাড়িটাকেই ওখানে নিয়ে বসিয়ে দিন। অথবা দেশ বা বিদেশের যে বাড়ি আপনার পছন্দ সেটাকেই বানাতে পারেন মনের বাড়ি।
মনের বাড়িতে অনেকগুলো কক্ষ থাকবে। তবে দরবার কক্ষটি হবে সবচেয়ে বড়। দরবার থেকে ডানদিকের করিডোর দিয়ে যাবেন নিরাময় কক্ষ বা হিলিং সেন্টারে। আর বামদিক দিয়ে যাবেন কমান্ড সেন্টারে।
এছাড়া আপনার প্রয়োজনে মনের বাড়িতে গবেষণা কক্ষ, রেওয়াজ কক্ষ, অভিনয় মঞ্চ, ইবাদত বা প্রার্থনা কক্ষও থাকতে পারে।
মনের বাড়িতে যখনই যাবেন তখনই প্রয়োজন অনুসারে কক্ষ সংস্কার, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবেন।
নিরাময় : দায়িত্ব নিজেকে গ্রহণ করতে হবে
কমান্ড সেন্টার : কল্যাণ প্রক্রিয়া
কমান্ড সেন্টারের বহুমুখী ব্যবহার
কয়েক মুহূর্তের জন্যে আপনি কোনো একটা আনন্দদায়ক ঘটনা বা সুখানুভূতির কথা ভাবুন। ঘটনা যত তুচ্ছই হোক, কিছু যায় আসে না। অনুভূতিটাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমে হালকাভাবে চোখ বন্ধ করুন। চোখের দু’পাতা ধীরে ধীরে একসাথে লেগে যেতে দিন। ভ্রূ ও চেহারা কোঁচকাবেন না।
এরপর নাক দিয়ে দম নিয়ে মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন। দম নেবেন পেটে, ছাড়বেন মুখ দিয়ে।
খেয়াল করবেন- দম নেয়ার সময় আপনার বুক নয়, পেটের ওপরের অংশ ফুলবে এবং দম নেয়ার চেয়ে ছাড়ায় সময় দেবেন একটু বেশি। একে বলা হয় আবেশন প্রাণায়াম বা এবডমিনাল ব্রিদিং।
এসময় দম নিতে নিতে ভাববেন-প্রকৃতি থেকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি শরীরে প্রবেশ করছে... আর দম ছাড়তে ছাড়তে ভাববেন- শরীরের সকল দূষিত পদার্থ বাতাসের সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে...
এভাবে ৬ থেকে ১০ বার দম নেয়ার পর দম স্বাভাবিক হতে দিন। অর্থাৎ নাক দিয়ে দম নিয়ে নাক দিয়েই ছাড়বেন।
একনাসা প্রাণায়াম ইতিবাচকভাবে বদলে দেয় মস্তিষ্কের কর্মতৎপরতা : সাম্প্রতিক গবেষণার আলোকে
এরপর আপনি মনোযোগ দেবেন আপনার মাথার তালুর পেশিতে। অনুভব করবেন সেখানে রক্ত চলাচল বাড়ছে... একটু গরম গরম লাগছে... একটু শির শির করছে। পেশি শিথিল হয়ে গেছে... পেশি ভারী হয়ে গেছে...
এ পর্যায়ে আপনার ভাবনাটাই যথেষ্ট। আসলে হচ্ছে কিনা তা যাচাই করার প্রয়োজন নেই।
এরপর একে একে শরীরের বাকি অঙ্গগুলোয় মনোযোগ দেবেন.....কপাল, চোখ, মুখমণ্ডল, গলা, কাঁধ, হাত, বুক, পিঠ, মেরুদণ্ড, পেট, কোমর, উরু, হাঁটু, পা, গোড়ালি, পায়ের পাতা, আঙ্গুল ...
প্রথমে মাথায় মনোযোগ দেবেন। এরপর ধীরে ধীরে মাথা থেকে মনোযোগ নামতে থাকবে পায়ের পাতায়।
এসময় অনুভব করবেন- বরফগলা পানি যেমন বরফের গা বেয়ে নিচের দিকে নেমে যায়, শিথিলতাও তেমনি স্রোতের মতো আপনার মাথা থেকে গা বেয়ে পায়ের দিকে নেমে যাচ্ছে... আপনার অঙ্গ শিথিল ও নিষ্প্রাণ হয়ে আসছে...
এরপরে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। দম নেয়ার চেয়ে ছাড়ায় সময় একটু বেশি নেবেন। এভাবে ৫/৬ বার দম নিন।
এরপর দম খেয়াল করবেন। মনোযোগ দেবেন দমের ওপর। বাতাস স্বাভাবিক যাওয়া-আসা করুক, আপনি শুধু দম খেয়াল করবেন। মনোযোগ দেবেন নাকে দমের প্রবেশ পথে।
নিয়মিত প্রাণায়াম করুন, আপনি সুস্থ থাকবেন
এ পর্যায়ে আপনার শরীর ভারী লাগতে শুরু করবে। ভাববেন আপনার শরীর ভারী হতে হতে জড় পদার্থে পরিণত হচ্ছে। একেবারে পাথরের মতো ভারী হয়ে গেছে।
এবারে ভাবুন- আপনার শরীরের প্রতিটি কোষ বালুকণা হয়ে গেছে! এবং বালুকণাগুলো শুকনো বালুর মতো ঝুর ঝুর করে পড়ে যাচ্ছে।
আপনি হয়ে গেছেন একটা বালুর স্তুপ।
এরপর কল্পনা করবেন ঠান্ডা বাতাস আসছে... বাতাস ঝড়ের রূপ নিচ্ছে এবং ঝড় বালুগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
আপনার শরীর বলতে আর কিছুই নেই। আপনার বলতে রয়েছে আপনার চেতনা, আপনার মন। আপনি এখন পুরোপুরি শিথিল।
শিথিলায়নের গভীর স্তরে পৌঁছে গেছেন আপনি। আপনার ব্রেন ফ্রিকোয়েন্সি বিটা স্তর থেকে নেমে গেছে আলফায়। মনের বাড়ির পথে এখন আপনি আলফা স্টেশনে এসে পৌঁছেছেন।
এরপর ১৯ থেকে ০ গণনা করে নীল আলোর পথে আপনি মনের বাড়ি পৌঁছে যাবেন।
মনের বাড়িতে পৌঁছে আপনি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবেন। চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।
এরপর আপনি মনের বাড়ির দরবারে গিয়ে আরাম করে বসবেন।
মনের বাড়ি চেতনার এক শক্তিশালী স্তর। এ স্তরে মন যে-কোনো কল্যাণমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্রেনকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে।
তাই আত্মউন্নয়নের জন্যে শারীরিক-মানসিক-পারিপার্শ্বিক প্রয়োজন পূরণের জন্যে মনে মনে অটোসাজেশন দেবেন বা ইতিবাচক কথা বলবেন।
বিশ্বাস প্রবলের হাতিয়ার অটোসাজেশন
জীবন বদলের চাবিকাঠি অটোসাজেশন : কতখানি কার্যকর? কীভাবে চর্চা করবেন?
এরপর আপনি সময় নিয়ে মনছবি বা নিজের জন্যে কল্যাণকর যে-কোনো ইতিবাচক ভাবনায় ডুবে যেতে পারেন।
মেডিটেশন শেষ। এবার জেগে ওঠার পালা। আপনি এবার মনের বাড়ি অর্থাৎ মনের গভীর স্তর থেকে স্বাভাবিক সচেতন স্তরে ফিরে আসবেন।
প্রথমে লম্বা দম নেবেন। তারপর কল্পনা করবেন উড়ে যাওয়া বালুকণাগুলো চারপাশ থেকে এসে শরীর গঠন করছে।
এরপর ০ থেকে ৭ গণনা করে জেগে উঠবেন। চোখ মেলার পর জোরে বলবেন- বেশ ভালো লাগছে। বেশ বেশ ভালো লাগছে।
পড়ে মনে হতে পারে- অনেক। কিন্তু অডিও গাইড যখন আপনি ব্যবহার করবেন তখন এ ধাপগুলো একটার পর একটা কখন যে আপনি পার হয়ে গেছেন তা টেরই পাবেন না! কারণ কোয়ান্টাম মেথড মেডিটেশন একটি পরীক্ষিত, বৈজ্ঞানিক মেডিটেশন পদ্ধতি। মেডিটেশন করার এত সহজ নিয়মের কারণে ৮ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছরের প্রবীণ অনায়াসে এ মেডিটেশন আয়ত্ত করতে পেরেছেন, চর্চা করতে পেরেছেন, উপকৃত হয়েছেন।
যে ৮টি কারণে শিক্ষার্থীদের মেডিটেশন করা দরকার
প্রাচ্যের পদ্ধতিই বেশি কার্যকর-পাশ্চাত্য বিজ্ঞানীদের সমীক্ষা