স্পিরিচুয়াল ফিটনেস ও কুশলের বিজ্ঞান


শিক্ষাবিদ, লেখক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের সাবেক ডীন। সুস্বাস্থ্য, মেডিটেশন, সুস্থ জীবনাচার ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে।

 

স্পিরিচুয়ালি ফিট মানে আধ্যাত্মিকভাবে ফিট। এ নিয়ে আজকাল চর্চা হচ্ছে। একে অনেকে বলেন working in. এই নতুন ট্রেন্ডকে বলা হচ্ছে আত্মার ব্যায়াম বা exercise of the soul. এমন আত্মার ব্যায়াম হতে পারে ইয়োগা বা সুইমিংপুলে এপাশ থেকে ওপাশ সাঁতার কাটা, কিন্তু সে-সময় তিনি যেন বর্তমানের প্রতি মনোযোগী থাকেন।

বিশেষজ্ঞরা একে বলেন চলমান ধ্যান, যা শরীরকে মন ও আত্মার সাথে সংযুক্ত করে।

ওয়েলনেস ডিরেক্টর রেবেকা গরেল বলেন, ‘কেবল শরীরের ব্যায়াম নয়, দৈনন্দিন জীবনে যুক্ত হোক স্পিরিচুয়াল ফিটনেস। এর ফলে হয় অন্তঃঅভিমুখী সামগ্রিক ব্যায়াম বা Inner directed holistic exercise.’

গরেল আরো বলেন, ‘শরীরচর্চা প্রভাব ফেলে মন ও আবেগের ওপর, যা পালাক্রমে প্রভাব ফেলে আত্মার কুশলের ওপর। মন ও শরীরের ঐকতান ঘটলে এমন এক প্রবাহ আসে, যা আমাদেরকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সাথে একাত্ম করে। আর এই স্থানে উপনীত হওয়া পরম সৌভাগ্যের।

ইয়োগা, তাইচি ও কারাতে হচ্ছে এমন একেকটি চর্চা, যা মন ও শরীরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। ‘চি’-এর ভেতরে আছে জীবনশক্তি, নিরাময় ও শক্তি বর্ধনের গুণাগুণ। এ-ছাড়া কেবল অ্যারোবিক ব্যায়াম নয়; ঘরের বাইরের ব্যায়াম, হাইকিং, প্রকৃতিতে হাঁটা—এমন সব চর্চাও আত্মাকে পরিপূর্ণ করে। এজন্যে হিমালয়ে আরোহণ বা পদ্মাসনে উপবেশন একান্ত প্রয়োজন নয়, যে-কোনো ব্যায়ামে আনা সম্ভব ধ্যানের অবস্থা—এমনটাই বলেন মিনেসোটার হেলথ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা রুথ স্ট্রিকার।

স্থির হয়ে কোথাও বসেও নিজের সাথে একান্ত হয়ে ভাবনাগুলো একত্র করলে আসে আধ্যাত্মিকতা। সেজন্যে অন্য চিন্তাকে আমলে না এনে একান্তে ব্যায়াম করতে বলা হয়।

জানতে হবে কুশলের বিজ্ঞান। দেহের ভার বা ওজন কমালে আসে অনেক কুশল। আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্য প্রভাব ফেলে মনের স্বাস্থ্যের ওপর। আমরা যদি কঠোর নিয়ম বেঁধে আহার ও ব্যায়াম করতে মনস্থ হই, অনেক সময় আমাদেরকে অবসন্নতা গ্রাস করে, কখনো আমাদের মধ্যে আসতে পারে অপরাধবোধ বা লজ্জাও! বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিজেকে এমন কঠিন নিয়মে আচ্ছন্ন করে থাকলে এখনই এর রাশ আলগা করুন। যা করবেন ভালোবেসে করুন। কারণ কঠিন নিয়মে বাঁধা ডায়েট বা ডায়েটিং থেকে হতে পারে আহারে বৈকল্য, বিপাকক্রিয়া হতে পারে গোলমেলে, দেখা দিতে পারে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাও।

বিজ্ঞানীরা বলেন, ক্যালরি গণনা না করে বরং প্রসেসড ফুড বা পরিশোধিত খাবার, অতিরিক্ত চর্বি লবণ ও চিনিমিশ্রিত খাবার থেকে সরে আসুন। টাটকা ফল, সবজি, হোল গ্রেইন ও লিন (ন্যূনতম ক্যালরি ও স্বল্প চর্বিযুক্ত) আমিষের দিকে চলে আসুন। এতে ওজন কমবে এবং স্বাস্থ্য থাকবে সুঠাম।

মনোবিজ্ঞানী আন্দ্রেয়া ওয়াচটার বলেন, এত গোনাগুনতি ও ডায়েটিং না করে বরং আপনার সজ্ঞা বা ইনট্যুশন যা বলে সে-রকম খাবার খান। The happiness lab with Laurie Santos এটিকে উল্লেখ করেছে intuitive eating হিসেবে। সেইসাথে থাকুন সচল ও সক্রিয়। আর লেগে থাকুন।