হাঁটুন সবাই একসঙ্গে

শিক্ষাবিদ, লেখক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের সাবেক ডীন। সুস্বাস্থ্য, মেডিটেশন, সুস্থ জীবনাচার ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে।

 

হাঁটার রয়েছে নানা স্বাস্থ্য হিত। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, পিঠ ও কোমর ব্যথা উপশমে আছে এর ইতিবাচক প্রভাব। লো ব্যাকপেইন বা কোমর ব্যথা জগৎজুড়ে মানুষকে ভোগাচ্ছে আর এর শিকার প্রায় ৬ কোটি ১৯ লক্ষ মানুষ।

লো ব্যাকপেইন আছে এমন অনেকের ব্যথা ঘুরে ঘুরে আসে। উপশমের পর ফিরে আসে আবার। সেরে ওঠা ৭০ শতাংশ মানুষের ব্যথা বছরে একবার ফিরে আসে।

বিশ্ববিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে দেখা যায়—এমন দুর্ভোগ যাদের হয়, তাদের ব্যথা উপশমে আর এতে আরাম দিতে হাঁটার জুড়ি নেই। যারা নিয়মিত হাঁটেন, তাদের এই অভ্যাস কোমর ব্যথা বার বার ফিরে আসা প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।

এ পর্যন্ত কোমর ব্যথা হলে এর চিকিৎসার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর প্রতিরোধের দিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় নি।

অ্যারোবিক ব্যায়াম আসলেই খুব প্রয়োজনীয়, তা এ পর্যন্ত অনুধাবন করা হয়েছে কম। কোমর ব্যথা উপশমে শরীরকে সচল রাখা খুব জরুরি। অনেক অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কোমর ব্যাথা মোকাবেলায় হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম বিশেষত হাঁটা এক কার্যকর হাতিয়ার।

কী পরিমাণ হাঁটা দরকার, এ নিয়েও ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। হাঁটা যে এক অমূল্য প্রতিরোধ হাতিয়ার, এ নিয়েও গবেষণা হয়েছে কম। শরীরকে সচল আর চালু রাখলে শিরদাঁড়াতে রক্তের চলাচল বাড়ে। সেখানে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আর পুষ্টি উপকরণ পৌঁছায়, আর এতে শরীরের ক্ষত সেরে ওঠা তরান্বিত হয়।

আমাদের ব্যাক বা শিরদাঁড়ার জন্যে রয়েছে কিছুটা চ্যালেঞ্জ। তাই হালকা ধরনের শরীরচর্চা করা হলে ব্যাকপেইনে আরাম হওয়া সম্ভব।

গবেষক মার্ক হ্যাঙ্কক বলেন—হাঁটা খুব উপযোগী। এই ব্যায়াম হালকা, বার বার করা হচ্ছে আর শিরদাঁড়ার ওপর চাপ পড়ছে কম। পেশি এভাবে হচ্ছে মজবুত ও স্বাস্থ্যকর।

কোমরের ব্যাপারে বলা হয়—আমাদের শিরদাঁড়া অবলম্বন পায় যে পেশিগুলোর মাধ্যমে, হাঁটলে এদের অভ্যন্তরে রক্তের চলাচল বাড়ে। হাঁটার মাধ্যমে আমাদের কোমলাস্থি ও হাড় হয় শক্তিশালী। কেবল হাঁটা নয়, নড়াচড়া করলে বা সচল থাকলে শরীর সেরে ওঠে ক্ষত থেকে। সেইসাথে ব্যথা-বেদনা উপশমে এবং এর পুনরাবৃত্তি কমাতে হাঁটা বেশ কার্যকর।

হপ্তায় অন্তত পাঁচ দিন আধঘণ্টা করে জোরে হাঁটলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সুফল আমারা পাব।