সন্তান কখন কথা শুনবে?

সন্তান দুষ্টুমি করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সন্তান যখন কথা শোনে না তখন অধিকাংশ বাবা মা-ই অসহিষ্ণু হয়ে যান। 

এই সহজ উপায়গুলো জেনে নিলে খুব সহজেই আপনি সন্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন।  

১. সন্তানের রোল মডেল হোন   

সন্তান আপনাকে দেখেই শেখে। তাই নিজ আচার-ব্যবহারে সচেতন হোন। 

ছোটবেলা থেকেই তার সামনে এমন একটি আদর্শ তুলে ধরুন যার প্রতিফলন আপনার মধ্যে আছে। 

আপনি সন্তানকে বলবেন, ভালো কথা বলো আর নিজে বকাবকি করবেন, তা হবে না। কারণ ৯৮% ক্ষেত্রেই আপনি যা করবেন, সন্তান সেটাই অনুসরণ করবে। কাজেই আপনার সন্তানকে তা-ই করতে বলুন যা আপনি নিজেও করেন। 

২. প্রশ্নের জবাব দিন 

স্বাভাবিক কৌতূহল থেকেই সন্তান প্রশ্ন করে। সেগুলোর জবাব দিন। অবান্তর জিজ্ঞাসা ভেবে এড়িয়ে যাবেন না। ধমক দিয়ে থামিয়ে দেবেন না। 

যদি উত্তর আপনার কাছে সে না পায়, সে অন্য কারো কাছে জানতে চাইবে। এবং অধিকাংশ সময়ই সে ভুল জবাব পেতে পারে যা সে লালন করবে সারাজীবন।   

তাই তার কৌতূহল মেটাবার জন্যে জীবন জগৎ ধর্ম নৈতিকতা মূল্যবোধ ইত্যাদি শাশ্বত সুন্দর কথাগুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়ার এরকম চমৎকার সুযোগকে গ্রহণ করুন। 

৩. প্রশংসা করুন, উপহার দিন

কর্মজীবী বাবা-মা হিসেবে সপ্তাহে অন্তত একটা দিন অবশ্যই সন্তানকে দিন। তার সাথে খেলুন, বেড়াতে নিয়ে যান, আপনার জীবনের গল্প শোনান। কোয়ালিটি সময় নিশ্চিত করুন। কারণ আর যা-ই দিন না কেন সন্তানের জন্যে জরুরি আপনার সঙ্গ। 

আপনার সময় নেই চিন্তা করে কোনোকিছুর লোভ দেখিয়ে তাকে পড়তে বা কাজ করতে বলবেন না। যদি সে কোনো ভালো কাজ করে তাহলে প্রশংসা করুন। ছোটখাটো উপহার দিন। তাহলে পরবর্তীতে ভালো কাজ ও ভালো ব্যবহারে সে উদ্বুব্ধ হবে।

৪. নিজের ভুল অকপটে স্বীকার করুন 

সন্তানের সামনে কোনো ভুল করে ফেললে অকপটে দুঃখ প্রকাশ করুন। এতে আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ ও আস্থা বাড়বে। 

একইভাবে সন্তান ভুল করলে সবার সামনে বকঝকা করবেন না। ভুল ধরিয়ে তাকে অপ্রস্তুত করবেন না। 

মনোবিদরা বলেন- সন্তানকে কথা শোনানোর জন্যে প্রথমেই প্রয়োজন তাকে কাছে ডেকে আদর করে চোখে চোখ রেখে আপনি কী চান, সেটা তাকে মমতার ভাষায় বোঝানো।

৫. ধৈর্য হারাবেন না 

‘সন্তান আমার কথা শুনবে না’- অনেক বাবা-মায়ের ভ্রান্ত ধারণা এটি। খোশগল্পে সন্তানের সামনেই তার ব্যাপারে অতিরিক্ত সমালোচনা করেন, অন্যের সাথে তুলনাও করেন। 

এমন না করে ধৈর্যের সাথে সন্তানকে বোঝাতে হবে, আপনি তার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছেন। পরবর্তীতে সে যেন এমন আচরণ না করে। 

৬. গায়ে হাত তুলবেন না 

সন্তান কথা না শুনলে বা ভুল করলে তাকে শাস্তি দিতেই পারেন। মারের ভয় দেখাতে পারেন। তবে কখনোই তার গায়ে হাত তুলবেন না। 

শাসনের শেষ হাতিয়ার-চড়থাপ্পড়। এটা প্রয়োগ করলে আপনার নিয়ন্ত্রণে আর কিছুই থাকবে না।     

তাই সন্তান যতই অবাধ্য হোক, গায়ে হাত তুলে কখনো শাসন করতে যাবেন না। এতে আপনার সন্তান আরো জেদি ও বদমেজাজি হয়ে যেতে পারে।

৭. নৈতিকতা শেখান

একটু পড়তে শিখলেই সন্তান ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে শেখান বা সাথে নিয়ে নিজে পড়ুন। প্রার্থনা করতে শেখান। নিজ ধর্মপালনে উদ্বুদ্ধ করুন। এতে তার নৈতিক ও মানবিক শক্তি জাগ্রত হতে থাকবে।

শিশুকালে নৈতিকতাবোধ জন্ম নিলে বয়ঃসন্ধিতে সে আপনার কথা শুনবে। আচরণ পরিমার্জিত থাকবে। 

শিশুকাল থেকেই সন্তানের মধ্যে দানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। দেয়ার আনন্দ তাকে উদার করবে।

৮. অটোসাজেশন দিন

ঘুমের সময় মস্তিষ্ক তথ্য সহজে রিসিভ করতে পারে। তাই আপনি যে-সব ভালো কাজ ও আচরণ সন্তানকে শেখাতে চান, সেই কথাগুলো ঘুম পাড়ানোর সময় মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলতে থাকুন। 

যেমন, ‘তুমি ভালো মানুষ হবে’/‘তুমি খুব ভদ্র, খাবার দিলে খেয়ে ফেলো’/‘তুমি মেধাবী, তুমি সাহসী’।

এই ৮ টিপস যত অল্প বয়স থেকে কাজে লাগাবেন ততো সন্তান আপনার কথা শুনবে, আপনার বাধ্যগত থাকবে।