ক্যারিয়ার শুরু করতে যাচ্ছেন? মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলো

ক্যারিয়ার কী জিজ্ঞেস করলে অনেকেই বলবেন চাকুরী। চাকরি আর ক্যারিয়ার কিন্তু এক জিনিস নয়! 

শিক্ষাজীবনে অধিকাংশেরই অজানা থাকে যে ক্যারিয়ার শিক্ষামাত্রই চাকরি খোঁজা নয়। এন্ট্রিপ্রিনিয়ারশীপ বা শিল্পোদ্যোগ, ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা, কনসালটেন্সি বা পরামর্শ সেবা- আছে এমন হরেক ক্যারিয়ার পথ। ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের সময় কিছু জিনিস মাথায় রাখলে আপনি এগিয়ে থাকবেন অন্যদের চেয়ে অনেকখানি।

১. SWOT Analysis এর মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে জানুন

SWOT চারটি ইংরেজি শব্দের আদ্যোক্ষর দিয়ে গড়া-

S- Strength

W- Weakness

O- Opportunities

T- Threats

Strength- এর সাথে আসে Opportunity। খুঁজে নিন, আপনার Strength কোথায়। সেই জায়গায় Opportunities কী কী, সেগুলো বিবেচনা করে দেখুন। 

Weakness- এর সাথে আসে Threat। ভেবে বের করুন আপনার দুর্বলতাগুলো এবং সেগুলো আপনার ক্যারিয়ারে কতটা ও কীভাবে হুমকি। 

SOWT পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজের শক্তিশালী আর দুর্বল দিক সম্পর্কে যেমন জানা যায়, তেমনি ধারণা পাওয়া যায় পছন্দের ক্ষেত্রগুলোতে কাজের সফলতার সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে। 

২. যেটাতে ভালো সেটা নিয়ে এগিয়ে যান

নিজের সম্ভাবনা-সুযোগকে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে আসতে হবে- চাকরি করবেন না, স্বাধীন পেশায় যাবেন। এজন্যে চিন্তা করতে হবে কোন কাজ আপনি ভালো পারেন, কোন কাজে বেশি আনন্দ পান, কোন কাজে নিজের দক্ষতা ও মেধাকে সেবায় রূপান্তরিত করতে পারেন। 

পরিবারের ইচ্ছা বা কাউকে অনুসরণ করে নয়, পেশা নির্বাচন করুন নিজ পছন্দ অনুসারে। নিজেকে সম্মান করুন, আস্থা রাখুন নিজের যোগ্যতায়। কারণ আপনি নিজেকে যা পাওয়ার উপযুক্ত মনে করবেন আপনি পাবেন তা-ই।

৩. নিয়মিত পাঠাভ্যাস গড়ে তুলুন

শেখার জন্য নিয়মিত পড়া খুবই কার্যকরী পন্থা। এর মাধ্যমে আপনি যে জ্ঞান অর্জন করবেন তা কর্মজীবনে আপনাকে এগিয়ে রাখবে। 

পেশা সংশ্লিষ্ট বইয়ের পাশাপাশি পড়া যেতে পারে অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক বই। এতে বিকাশিত হবে আপনার অন্তর্দৃষ্টি।

৪. ক্রমাগত দক্ষতা বাড়াতে সচেষ্ট হোন 

দক্ষতা অর্জন করলে কাজের পেছনে আপনার ছুটতে হবে না। কাজ আর সম্মানই আপনাকে খুঁজে নেবে। তাই আপনি যে পেশায় আছেন সেটায় ভালো করতে কী কী দক্ষতা লাগে তা খুঁজে বের করুন। মনোযোগ দিন সেই দক্ষতা অর্জনের দিকে। নতুন দক্ষতা অর্জন করুন এবং প্রাসঙ্গিক সার্টিফিকেশন অনুসরণ করুন। 

সমসাময়িক প্রকাশনা পড়া, ট্রেনিং গ্রহণ, প্রফেশনাল কোর্স করা, অর্থাৎ যত উপায়ে পারেন দক্ষতা বাড়ান। এই চর্চা আপনাকে প্রতিযোগিতামূলক চাকরি বাজারে টিকে থাকতে সহায়তা করবে।

শুধু কর্মী বা কেরাণী নয়, ব্যবস্থাপকীয় গুণাবলি অর্জন আপনাকে উত্তরোত্তর সামনের ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাবে। 

৫. অর্থ, নাকি ভালবাসা? 

প্রশ্নটি আসে চাকরির ক্ষেত্রে। আপনি কোথাও চাকরি করছেন মানে হলো অর্থের বিনিময়ে আপনি আপনার শ্রম বিক্রি করছেন। অতএব, একটি জায়গায় পড়ে না থেকে আপনি সেখানেই চাকরির চেষ্টা করুন যেখানে আপনি শ্রমের বিক্রয়মূল্য, অর্থাৎ বেতন বেশি পান।

তবে সংশ্লিষ্ট কাজটি যদি আপনার ভালবাসা হয়, আপনার জীবনের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে অর্থের দিকে না তাকিয়ে নিজের সর্বোচ্চটি দিন। অর্থ আসবে বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে। 

৬. সম্ভব হলে সেই কাজটিই বেছে নিন যা আপনি ভালবাসেন

কারণ ভালবাসার কাজে বিরক্তি আসে না। যখন আপনি ভালবাসার কাজ করবেন তখন কাজটাকে আর কাজ মনে হবে না। নেশাকে পেশা বানাতে পারলে এগিয়ে যাওয়াটা হবে সহজতর। 

আপনি যে কাজই করুন না কেন, আপনার কাছে যদি এটি পরিষ্কার থাকে যে, কেন আপনি কাজ করছেন এবং সে কেন-র উত্তর যদি অর্থপূর্ণ কল্যাণকর কিছু হয় তাহলেই কাজ হবে আপনার জন্যে অফুরন্ত আনন্দের উৎস।

৭. মেধাকে সেবায় রূপান্তরিত করুন

আমরা অর্থ সম্মান পরিচিতি ক্ষমতাকে সফল কর্মজীবনের প্রোডাক্ট বা প্রাপ্তি মনে করি। আসলে কর্মজীবনের প্রোডাক্ট শুধু কর্মই। যা যা প্রাপ্তি সেগুলো বাই-প্রোডাক্ট বা বাড়তি পাওয়া। কাজের মাধ্যমে আপনি যত সেবা দেবেন তত অর্থ সম্মান খ্যাতি আসবে বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে।   

আপনি যদি আপনার মেধাকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে পারেন, বিকশিত করতে পারেন এবং সৃষ্টির সেবায় ব্যয় করতে পারেন, তবে সামান্য কাজও আপনাকে অসামান্য মানুষে পরিণত করবে। মেধাকে বিকশিত করে দক্ষতার মাত্রাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন যে, আপনার পেশায় যদি কারো নাম উল্লেখ করতে হয় তাহলে আপনার নামটিই চলে আসবে সবার আগে।

৮. নেটওয়ার্কিং বাড়ান 

পেশাজীবন সাফল্যের একটি সূত্র হলো নেটওয়ার্কিং। তাই শক্তিশালী পেশাদার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। বিভিন্ন শিল্প ইভেন্টগুলিতে যোগ দিন। পেশাজীবীদের প্ল্যাটফর্মগুলোতে সহকর্মীদের সাথে সংযোগ করুন এবং নেটওয়ার্কিং গ্রুপগুলিতে অংশগ্রহণ করুন। এভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলা নতুন সুযোগ, পরামর্শ এবং মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টির দরজা খুলে দিতে পারে।