published : ২৮ এপ্রিল ২০২৫
মানুষ অলসতাকে ভয় পায়, তবুও ব্যস্ত থাকার জন্যে একটা কারণ চাই!
তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে কেন আমরা অলসতা বেছে নিই?
যদি একজন ব্যস্ত লোককে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি এত ব্যস্ত থাকেন? তিনি বলবেন, কাজটিই তার ভালবাসা।
সেই গানের মতো- ‘ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর, তাই বলে ভেবো না আমায় স্বার্থপর’!
ধরুন, আপনার 'টু-ডু'- তে একটা একটা করে টিক চিহ্ন দিচ্ছেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন, বিকেল চারটা বাজে! অথচ আপনি এখনও দুপুরের খাবার খান নি! এটা আপনার জন্যে একটি সাধারণ ঘটনা হতে পারে!
কিন্তু অসাধারণ ব্যাপার হলো- শরীরের প্রতিটি কোষ আপনাকে জানান দিচ্ছে, পরবর্তী যে কাজগুলো আপনাকে করতে হবে। এবং আপনার এই ব্যস্ততাই আপনার শরীরে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে, মানসিক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করছে।
কথায় আছে, "আপনি যদি কাউকে দিয়ে কাজ করাতে চান, তবে একজন ব্যস্ত ব্যক্তিকে কাজটি করতে বলুন”! কারণ তিনিই সবচেয়ে কম সময়ে সব থেকে ভালো উপায়ে কাজটি করে দেবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মোট মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। প্রায় ২৫ শতাংশ স্তন ও কোলন ক্যান্সার, ২৭ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৩০ শতাংশ হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণও এটি।
তাই কাজের ধরন যদি হয় ডেস্কে বসে তাহলে প্রতি আধঘণ্টা পর পর ছোট্ট বিরতি নিন। উঠে দাঁড়ান, একটু হাঁটুন।
প্রতিদিন সকালে পত্রিকাটা দাঁড়িয়ে পড়ুন, কিচেনের কাটাকুটিগুলোও করুন দাঁড়িয়ে।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব ছোটবেলায় এমনকি পাঁচ বছর বয়সের আগে থেকেই যেসব শিশু খেলাধুলা-দৌড়ঝাঁপের মধ্য দিয়ে অধিকতর সক্রিয় থাকতে অভ্যস্ত তাদের সুষম মনোদৈহিক বিকাশ এবং পরবর্তী জীবনে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি।
আবার যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন ও কর্মচঞ্চল থাকেন তাদের মধ্যে বিষণ্নতার প্রকোপ কম; মেন্টাল ফিটনেসও তাদের তুলনামূলক বেশি।
দুর্ঘটনায় এক পিতা তার ছেলেকে হারান। ছেলের মৃত্যুশোকে কাজকর্ম প্রায় বন্ধ। শরীরে দেখা দিচ্ছে নানান রোগের আলামত!
একদিন তার ছোট্ট মেয়েটা আবদার করলো- বাবা! আমাকে একটা নৌকা বানিয়ে দেবে?
কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে তিনি কাঠের একটি নৌকা বানালেন। নৌকাটি মেয়ের হাতে তুলে দিয়ে তার মনে হলো, ওটা বানানোর এই কয়েক ঘন্টা তিনি পুত্রশোকের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত ছিলেন। কারণ ছেলের মৃত্যুর পর এই প্রথম তিনি এতটাক্ষণ ছেলেকে নিয়ে ভাবার সময় পান নি।
এরপর তিনি কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন এবং একসময় পুত্রশোক কাটিয়ে সুস্থ-কর্মক্ষম হয়ে উঠলেন।
গবেষক এবং নিউরো-সায়েন্টিস্টরাও এই বিষয়ে একমত।
কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্ট প্রফেসর ইয়ানিক গ্রিপ, ৬৫ বছর বয়সে অবসরে গেছেন এমন ১০০১ জন সুইডিশ নাগরিককে দুবছর পর্যবেক্ষণ করেন।
প্রফেসর গ্রিপের মতে, প্রবীণদের কর্মসম্পৃক্ততা, বিশেষত সেবাধর্মী কাজে ব্যস্ততা, তাদের সুস্থতার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে তারা উদ্যমী থাকেন, মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডেও সক্ষম থাকেন।
শরীরকে সচল রাখতে দৌড়াতেই হবে এমনটা নয়। মেডিটেশন বা আত্মউন্নয়নমূলক কাজে জড়িত থাকাকেও ব্যস্ত থাকা হিসেবে গণ্য করা হয়।
ফরাসি সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো একবার লিখেছিলেন, "একজন মানুষ নিষ্ক্রিয় হয় না। কারণ সে চিন্তায় নিমগ্ন থাকে। একটি দৃশ্যমান শ্রম আছে এবং একটি অদৃশ্য শ্রম আছে।"
তাই বাস্তব কারণে দৈহিক কসরত করতে না পারলেও মনের চাকাকে সচল রাখুন। আপনি থাকবেন ফিট!