সুখের চৌদ্দশ বছর!

জীবনে একবারই স্যারের বকা খেয়েছিলাম পুরো ক্লাসের সামনে; দোষ ছিল লেকচারের সময় মোবাইলে এসএমএস দেখা এবং তা দেখে হাসা।

স্যারের বকুনি শেষ হলে বলেছিলাম, স্যার, আজকে বাবা-মার বিবাহবার্ষিকী, মাকে পাঠাতে গিয়ে ভুলে বাবা আমাকে এসএমএস পাঠিয়ে ফেলেছেন! মেঘের তর্জন-গর্জনের পর একটুখানি বর্ষণের মতন সেদিন আমার কথা স্যারের বিভীষণের পর ভীষণ হাস্যরোল তুলেছিল।

দিনটা ছিল পয়লা বৈশাখ-১৪ এপ্রিল। বাংলা বছরের প্রথম দিনটা তাই আমাদের পরিবারে সবসময় বিশেষ কিছু। কখনও বাবা-মাকে খুব আনন্দিত দেখতে পাই বলে, কখনও তাদের মুখ-দেখাদেখি আর কথা-বলাবলি বন্ধ বলে আমাদের ‘বার্তবাহকের’ কাজ করতে হয়!

তবে, হাঁ, ভালোবাসা যে কেবল বুড়োদের মধ্যেই সীমিত তা না। আমার জন্যেও আজ কেউ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, অন্তত এক ঘন্টা তো অপেক্ষা করতেই হবে। কারণ সমানাধিকারের জন্যে লড়াই করবে আর সমানতালে চায়ের কাপ আর ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে না–তা তো চলবে না! (অবশ্য ‘পাষাণ’ বলার আগে বলে রাখি: বাগদানের পর আমিও দাঁড়িয়ে থেকেছি গুণে গুণে ২১ ঘন্টা ২৫ মিনিট; কাজেই এখন বিয়ের পর মাথার পাশে একটু দাঁড়িয়ে না থাকলে ঋণটা শোধ হবে কীভাবে?)

অবশ্য পয়লা বৈশাখ সবার জন্যেই বিশেষ কিছু। ঈদ বা অন্য যে-কোনো পার্বনের চেয়ে এদিন যেন খুশির একটু বাড়াবাড়ি থাকে। রাস্তায় বেরুলে তা বোঝা যায়।

হবেই না কেন? এপ্রিলের গরমে সবাই অস্থির। এই গরম যেমন বাতাসের তেমনি বাজারের, যেমন পরীক্ষার তেমনি চাকরির। কারো হয়তো বই-খাতা নিয়ে চোখে ধন্দ লাগে, আবার কারো নির্দয়-নিষ্ঠুর বসের চাপে ঘাড়ে ভাঙন ধরে।

কেউ রোদের খরতাপে গলায় হাত দেন, কেউ বাজারে গিয়ে বুকে চাপড় দেন। ক্ষীয়মান পকেট-ম্রিয়মান প্রাণ, বর্ধমান ব্যস্ততা আর ধাবমান কলহে যখন মনে হয় ‘আর, পারছি না খোদা; এবার মাফও চাই-দোয়াও চাই’ তখনই তো বর্ষবরণের আবহটা একটুখানি শান্তির পরশ বুলায়। একঘেয়ে ডেস্কটপের মধ্যে হঠাৎ যেমন স্ক্রিন-সেভার চোখকে আরাম দেয়, ১৪ এপ্রিল তেমনি আমাদের নিভুনিভু কর্মছন্দে একটা ঝাঁকুনি লাগায়।

তাই বলছি কী, বৈশাখের প্রথম দিনটা একটু ভালো থাকুন। একটা ভালো পদ রান্না করুন, বা একটা প্রিয় শার্ট গায়ে দিন; যার সাথে কখনও ভালো ব্যবহার করা হয় নি তাকেও একটা সুযোগ দিন, যাকে কখনও বলা হয় নি ‘ধন্যবাদ- তুমি ‘তুমি’ হয়েছ বলে’, তার দিকে তাকান একটু মমতা নিয়ে।  

যে রাস্তাটায় প্রতিদিন খিটখিটে মেজাজে বাসে ঝুলতে হয় সে রাস্তায় ঘুরতে আসা রঙিন-ফড়িং-জোড়াগুলোর দিকে একটু নতুন করে তাকান। দেখবেন জীবনটাকে একটু হলেও বড় মনে হবে, সামনে যাবার প্রেরণা পাবেন।

তাই সবাইকে শুভেচ্ছা আর শুভকামনা। গেল দিনটা যেভাবেই যাক, আজকের দিনটা তো ভালো যেতে দোষ নাই! সবার একটা-একটা সুখের দিন করেই হয়ে যাবে চৌদ্দশ বছর। আমাদের সুখের চৌদ্দশ উনিশ বছর।