published : ১১ মার্চ ২০২৫
জেন-আলফা হলো একবিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেয়া প্রথম প্রজন্ম, যাদের জন্ম ২০১০ সাল বা তার পরে। তাদের অধিকাংশই মিলেনিয়ালদের (যাদের জন্ম ১৯৮২-১৯৯৬ সালের মধ্যে) বংশধর এবং জেন-জি’র (যাদের জন্ম ১৯৯৭-২০০৯ সালের মধ্যে) পরবর্তী প্রজন্ম।
বিশেষজ্ঞদের একটা অংশ জেন-আলফাকে ‘জেন-সি’ বা ‘জেনারেশন কোভিড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কারণ কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে এই জেনারেশনটির চিন্তা-চেতনা, আচরণ এমনকি অভ্যাসও অন্য প্রজন্মের তুলনায় বেশি প্রভাবিত হয়েছে।
এই প্রভাবই এই জেনারেশনটিকে অন্যদের থেকে করে তুলেছে অনন্য। এদের এই অনন্যতাকে বুঝতে হলে বাবা-মা বা অভিভাবকদের এদের সম্পর্কে জানতে হবে।
বর্তমান বিশ্বে বেশিরভাগ বাবা-মা এবং অভিভাবকের অভিযোগ, আমার বাচ্চা কথা শোনে না অথবা আমার সন্তান ঠোঁটকাটা স্বভাবের। মুখে যা আসে ঠাস করে বলে দেয়, সামনের মানুষটা তার কথায় কষ্ট পেল কিনা তা না ভেবেই।
তাদের কথার জবাব দিতে হবে, তাদের সব কথা শুনতে হবে, এক বাক্যে তাদের সব ফরমায়েশ পূরণ করতে হবে! যা চাই তা-ই দিতে হবে এবং এক্ষুণি দিতে হবে!
তাদের মনোযোগ আসে যায়; দীর্ঘসময় কোনো কাজে বা আলোচনায় মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হয়। সবকিছুতেই আশা দেখতে পায়, কিন্তু তা উবে যেতেও সময় লাগে না।
জেন-আলফাই প্রথম প্রজন্ম যারা কোভিড-১৯ অতিমারি দ্বারা সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়ে বেড়ে উঠছে। তারা খুব অল্প বয়স থেকেই ইন্টারনেট-ভিত্তিক গেম, ভিডিও এবং অ্যাপ ব্যবহার করতে শিখেছে। ফলে তাদের দক্ষতা এবং তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষমতা বেশি, যা তাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে।
করোনাকাল থেকে তথ্য-প্রযুক্তির মহাবিস্ফোরণের ফলে মনোযোগের অভাব, অস্থিরতা, এবং বাস্তব সামাজিক যোগাযোগের সমস্যা অন্য জেনারেশনের তুলনায় এদেরই বেশি।
প্রজন্ম বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, জেন-আলফা অন্য জেনারেশনের তুলনায় অধৈর্য হবার কারণ, তারা অল্প বয়স থেকেই চাওয়ামাত্রই পাওয়ায় অভ্যস্ত। কিন্তু এসবের পরও কেউ কেউ ধারণা করছেন, অন্যদের চেয়ে আলাদা বলেই জেন-আলফা হবে সমাজ সংস্কারের কারিগর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেনারেশন আলফা অত্যন্ত মেধাবী প্রজন্ম, প্রযুক্তিতে আগ্রহী এবং বিগত শতাব্দীর যে-কোনো প্রজন্মের চেয়ে অধিক বুদ্ধিদীপ্ত। মিলেনিয়াল এবং বেবি বুমারস থেকেও তারা সব বিষয়ে বেশি যত্নশীল।
জেনারেশন আলফা যেহেতু এখনও শিশু, তারা তাদের পিতা-মাতার আচরণ দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। তাদের অভিভাবকও যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ায়, অর্থাৎ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে বেশি তৎপর, তাই স্বাভাবিকভাবেই জেন-আলফা জন্ম থেকেই অনলাইনে বেশি জড়িত।
তারাই প্রথম প্রজন্ম যারা শৈশব থেকেই অনলাইন ক্লাস, ট্যাবলেট, কম্পিউটার এবং সর্বোপরি স্ট্রিমিং পরিষেবার অভিজ্ঞতা লাভ করছে। সিরি বা অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং ChatGPT-র মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহারে তারা বেশ দক্ষ।
কারণ এরাই আগামীর পৃথিবী গঠন ও পরিচালনার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তারা মনে করেন।
জেন-আলফা অন্য প্রজন্মের তুলনায় নিজেদের বহুমুখী ও সৃজনশীল হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ বেশি পাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি, গেমিং এবং কোডিং-র মতো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। তাই বলা বাহুল্য, তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান এবং সৃজনশীলতা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হবে।
আরো চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমান প্রজন্ম শারীরিক, মানসিক, আত্মিক এবং সামাজিক অর্থাৎ টোটাল ফিটনেস নিয়েও অনেক বেশি সচেতন। ফিটনেস ট্র্যাকার, হেলথ অ্যাপ এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্যবিধি, যোগব্যায়াম, মেডিটেশন এই প্রজন্মের কাছে অধিক পরিচিত বিষয়।
বিশেষজ্ঞতা বলছেন, জেন-আলফা হবে দেশ সংস্কারক। তারা জাত-পাত, ধনী-গরিব নির্বিশেষে মানুষের সেবা করবে, মমতার সেতুবন্ধন তৈরি করবে। সমতা, ন্যায়বিচার এবং এমন একটি বিশ্বের জন্যে লড়াই করবে যেখানে প্রত্যেকে বোধ করবে নিরাপদ।
উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার জন্যে জেন-আলফার মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা রয়েছে। এখন শুধু প্রয়োজন আমাদের সমর্থন, সঠিক দিক-নির্দেশনা এবং সাহস জোগানো।
বাস্তব-বিশ্বের সাথে প্রথমেই এদের সংযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে হবে। কারণ ডিজিটাল এই বিশ্বে সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সুসম্পর্ক শেখানোটাও অপরিহার্য।
আপনার জেন-আলফা সন্তানকে বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। হতে পারে কোনো বনভোজনে নিয়ে গেলেন যেখানে তারা খেলার সাথী পাবে। এতে করে অন্যদের সাথে তাদের বাস্তব সামাজিক যোগাযোগ বাড়বে।
বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য এবং কিসে তাদের মনোযোগ এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া পিতামাতা, শিক্ষাবিদ এবং সমাজের সবার দায়িত্ব। কারণ এটা তাদের মেধাবিকাশে সহায়ক হবে।
তাদের সমর্থন দেয়া, মনোবল বাড়ানো এবং সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্যে অভিভাবক হিসেবে আপনার মাথা ঠান্ডা এবং হৃদয় উষ্ণ হওয়া জরুরি। তাই জেন-আলফাকে গড়তে তাদের সাথে আপনিও নিয়মিত দু’বেলা মেডিটেশন করুন ও যোগব্যায়াম চর্চা করুন। তাদের নিয়ে প্রতি শুক্রবার অংশ নিন উন্মুক্ত প্রোগ্রাম সাদাকায়নে। তারা হবে শাণিত, আর আপনিও হবেন সমাজ পরিবর্তনে তাদের সহযোগী।
ইনশাআল্লাহ! সব সম্ভব!