তথ্য প্রযুক্তিঘটিত ১০ স্বাস্থ্য সমস্যা ও তার প্রতিকার

published : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

আধুনিক বিজ্ঞান অনেক ধরণের প্রযুক্তিপণ্য বা ডিজিটাল ডিভাইস উপহার দেয়ার সাথে সাথে আমাদের ‘উপহার’ দিয়েছে এমন কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা বা অসুস্থতা, যা ঘটে ডিভাইসের ভুল বা অতিরিক্ত ব্যবহারের দরুন এবং এগুলোও নামও বেশ চমকপ্রদ।

আসুন জানি এমন তথ্য প্রযুক্তিঘটিত কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কথা

দেখুন লেখাটির ভিডিও এডাপ্টেশন 

১. টেক্সট নেক সিন্ড্রোম (Text Neck Syndrome)

চেয়ারে বা সোফায় বসে কিংবা বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে অনেকের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় স্মার্টফোনের স্ক্রিনে নতমুখে তাকিয়ে। পরিণামে হয় Text Neck Syndrome- ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া। একই কাজের ফলে যখন ঘাড়ের পেশিতে টান খায় তখন তার নাম টেক নেক (Tech Neck)।

২. সেলফোন এলবো (Cell Phone Elbow)

একনাগাড়ে দীর্ঘক্ষণ সেলফোন বা স্মার্টফোন ধরে রাখলে কনুই বেঁকে থাকায় এর ভেতরের দিকে থাকা আলনার (Ulnar) নার্ভ-এর উপর চাপ পড়ে। এর ফলে অনামিকা ও কনিষ্ঠ আঙুলে ঝিনঝিন বা অবশভাব হয়। এর নাম Cell Phone Elbow বা Cubital Tunnel Syndrome.

৩. কারপাল টানেল সিন্ড্রোম (Carpal Tunnel Syndrome)

কীবোর্ড বা মাউস দিয়ে একটানা অনেকক্ষণ কাজ করার পর হাতের তালু বরাবর কব্জিতে ঝিনঝিন, ব্যথা বা অসাড় অনুভব করেন? একে বলে কারপাল টানেল সিন্ড্রোম, যা হয় কব্জির নার্ভে লম্বা সময় ধরে চাপ পড়ার কারণে। 

৪. গেমার্স থাম্ব (Gamer’s Thumb)

মোবাইলে ভিডিও গেম খেলা বা টেক্সট মেসেজ লেখার জন্যে আমরা দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ব্যবহার করি। দীর্ঘসময় কাজগুলো করলে আঙুলের রগে প্রদাহ অনুভূত হয়, যাকে বলে গেমার্স থাম্ব।

৫. আইপ্যাড শোল্ডার (iPad Shoulder)

হাতে ট্যাবলেট বা আইপ্যাড বেশিক্ষণ ধরে রাখলে কাঁধ এবং পিঠের উপরিভাগে টান খেয়ে ব্যথা অনুভূত হওয়ার নামই আইপ্যাড শোল্ডার বা আইপ্যাড নেক (iPad Neck)।

৬. কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম (Computer Vision Syndrome)

দিনের পর দিন লম্বা সময় ধরে ডিজিটাল স্ক্রিনে কাজ করেন যারা তারা ভোগেন কিছু ‘কমন’ স্বাস্থ্য সমস্যায়- চোখে ব্যথা, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, দৃষ্টি আচ্ছন্ন ও ঘোলা হয়ে আসা, ডাবল ভিশন ইত্যাদি। এগুলোর সম্মিলিত নাম ‘কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম’।

৭. নোমোফোবিয়া (Nomophobia)

‘প্রিয়’ ফোনটা খুঁজে না পেলে বা কিছু সময়ের জন্যে ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকলে কি দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ বা আতঙ্কে ভোগেন? আধুনিক প্রযুক্তিগত এই মানসিক অবস্থার নামই NO MObile PHone phoBIA, সংক্ষেপে Nomophobia!

৮. ফোমো (FOMO) 

সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে সময় কাটে যাদের, কিছু সময়ের জন্যেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকতে না পারলে মনে হয় সামাজিক জীবনের অনেক আপডেট বুঝি মিস হয়ে গেল! আধুনিক এই সোশ্যাল অ্যাংজাইটির নাম Fear of Missing Out বা FOMO.

৯. ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম (Phantom Vibration Syndrome)

থেকে থেকে মনে হচ্ছে ফোনটা বুঝি বেজে উঠল, অথচ হাতে নিয়ে দেখলেন কোনো ফোনকলই আসে নি– এই মানসিক অবস্থার নামই Phantom Vibration Syndrome.

১০. ইন্টারনেট এডিকশন ডিজ-অর্ডার (Internet Addiction Disorder)

অনলাইন কনটেন্ট বেশি বেশি দেখার পরিণাম হলো একটা পর্যায়ে এসব না দেখলে খারাপ লাগে, দেখার জন্যে তাড়নাবোধ হয়। যে-রকম মাদকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেলে আর মাদক ছাড়া ভালো লাগে না। অর্থাৎ, দুটো ক্ষেত্রেই মূল কারণ হলো এডিকশন বা আসক্তি। 

প্রতিরোধে কিছু টিপস

  • ঝুঁকে স্ক্রিন ব্যবহার পরিহার করতে ডিভাইসের স্ক্রিনকে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই ফুট দূরে আই লেভেলে রাখুন। অর্থাৎ চোখ এবং স্ক্রিন থাকবে সরলরেখায়। স্ক্রিনে একটানা অনেকক্ষণ অপলক তাকিয়ে না থেকে সচেতন থাকুন পলক ফেলার দিকে। স্ক্রিনের ব্রাইটনেস ও কনট্রাস্ট আপনার পারিপার্শ্বিক আলোর সাথে মিলিয়ে রাখুন।
  • ২০-২০-২০ পদ্ধতিঃ ডিভাইস ব্যবহারে বিরতি নিন; প্রতি ২০ মিনিট অন্তর অন্তত ২০ ফুট দূরে ২০ সেকেন্ডের জন্যে তাকান 
  • অবশ বা অসাড় হওয়া প্রতিরোধে কাঁধ, ঘাড়, কনুই, কব্জি মাঝেমধ্যে নড়াচড়া, টান টান অর্থাৎ স্ট্রেচিং করুন
  • স্ট্যান্ডিং ডেস্কে ডিভাইস রেখে দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারলে ভালো। তবে সেক্ষেত্রেও মাঝেমধ্যে হাঁটাচলা করুন, বসুন
  • স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট দীর্ঘক্ষণ হাতে ধরে রাখার বদলে স্ট্যান্ড ব্যবহার করুন
  • ব্লু লাইট ও রেডিয়েশন প্রতিরোধে কম্পিউটার মনিটরে এন্টি গ্লেয়ার স্ক্রিন অথবা চোখে এন্টি রিফ্লেকটিভ চশমা ব্যবহার করুন।
  • কাজের বিরতিতে হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢেকে রাখুন এক মিনিট। চোখের পেশি শিথিল হবে।

সর্বোপরি, প্রযুক্তিপণ্য ও ইন্টারনেটের ব্যবহার যত পরিমিত করতে পারেন তত মঙ্গল। প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যসচেতনতার সাথে।